জমি ফেরত পাচ্ছেন না এক ভিখারিনী by রমেশ কুমার পার্থ

বৃদ্ধা বেগমজান বিবিকে (৭০) পৈতৃক সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রকৃত তথ্য গোপন করে আদালতে বাটোয়ারা মোকদ্দমা করেছিলেন তাঁর চাচা। আদালত সেই মোকদ্দমায় ২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট তাঁর চাচার অনুকূলে ডিক্রি প্রদান করেন। সেই ডিক্রির কারণে বেগমজানের বসতভিটাসহ ফসলি জমিজমা প্রতিপক্ষের দখলে যাওয়ার উপক্রম হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বেগমজান বিবি ওই মোকদ্দমায় পক্ষভুক্ত হন।


প্রায় ছয় বছর মোকদ্দমা চলার পর আদালত ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বেগমজানের প্রাপ্য সম্পত্তির অংশ উল্লেখ করে আগের ডিক্রি বাতিল করে নতুন ডিক্রি জারি করেন। আদালতের ডিক্রি জারির দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বেগমজান সম্পত্তির দখল পাচ্ছেন না। বেগমজানের সঙ্গে আলাপ করে এবং তাঁর কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের পাঁচরুথি মৌজার সিএস (ক্যাডেস্টেল সার্ভে) খতিয়ানের ১৪৪৭ ও ১৪৪৮ নম্বর দাগের দশমিক ১৩ একর জমিসহ ২ দশমিক ৯৫ একর সম্পত্তির মালিক। এ সম্পত্তি পেয়েছেন তাঁর বাবা ও নানার অংশ থেকে। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই বৃদ্ধার সম্পত্তি জবরদখল করে রেখেছেন বলে বেগমজানের অভিযোগ। তিনি এলাকায় ভিক্ষা করে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মোকদ্দমার খরচও জুগিয়েছেন এভাবে। দুই বছর আগে আদালত থেকে রায় পেলেও জমির দখল পাচ্ছেন না তিনি। বরং হুমকির মুখে এলাকায় তাঁর চলাফেরা করাও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। থানায় বেশ কয়েকটি জিডিও করেছেন। ২০০৯ সালে বেগমজান বিবি তাঁর দুর্দশার কথা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর আবেদনটিতে মন্ত্রী লিখিত সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্রসচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এতেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর গত ৩ জুন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি বরাবরে আরও একটি আবেদন করেন তিনি। ওই কার্যালয়ের অপরাধ শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান এক অফিস আদেশে (স্মারক নম্বর ৩৪২৬) বেগমজান বিবির আবেদনটি ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে অনুসন্ধান ও জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে স্মারক নম্বর ২৩২৩ মূলে বেগমজান বিবির আবেদনটি গত ২৩ জুন নান্দাইল মডেল থানায় পাঠানো হয়। গত ২৬ জুন নান্দাইল মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামরুল হাসান অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ ছয়জনকে নোটিশ দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ৩০ জুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেন।
বেগমজান বলেন, ‘আমি আইন মানলেও যারা আমার সম্পত্তি জবরদখল করছে, তারা কোনো কিছুই মানতাছে না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বেগমজানের প্রতিপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হলেও তারা আসেনি। এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা ভাবছি।’

No comments

Powered by Blogger.