টিআর-কাবিখায় বরাদ্দ-সেই ট্রাডিশনই চলছে...

কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাবিখা নিয়ে একটি সরস মন্তব্য ছিল এভাবে_ কাবিখা, যত খুশি খা। কাবিখার মতোই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিন ধরে চালু সরকারের আরেকটি প্রকল্প টেস্ট রিলিফ বা টিআর-এর জন্য বরাদ্দ করা চাল ও গমের উল্লেখযোগ্য অংশও এমন কিছু লোকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, যাদের 'যত খুশি খা'-দের দলে ফেলতে


আদৌ সমস্যা হয় না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি_ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকুক না কেন, কাবিখা কিংবা টিআর-এর বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয় চলছেই। কয়েক দশক ধরে চালু এসব প্রকল্প ঘিরে যে দুর্নীতি ও অনিয়ম, তাকে সহজেই বলা যায়_ 'সেই ট্রাডিশন সমানে চলিতেছে।' কেউ তা বন্ধ করতে আগ্রহ দেখায় না। সরকারের খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ করা চাল-গমের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায় তথাকথিত জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতাকর্মীদের পকেটে। শনিবার সমকালে দেশব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে প্রণীত 'টিআর কাবিখায় হরিলুট' শিরোনামের প্রতিবেদনের চিত্রও অভিন্ন_ চট্টগ্রামে অভিযোগের শেষ নেই, রাজশাহীতে নয়ছয়, সিলেটে মিলেমিশে ভাগবাটোয়ারা এবং খুলনায় অনিয়ম-দুর্নীতি। অনেক স্থানে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী ও ধনাঢ্যরা একান্তই ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বরাদ্দ নিয়ে যাচ্ছে চাল ও গম। এভাবেই চলতে থাকবে? গত এক দশকে এ দুটি প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এটা বলা অন্যায় হবে যে, বরাদ্দের প্রায় সবটাই হরিলুট হয়ে গেছে। খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক দাবি করেছেন, 'টিআর-কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের চেয়ে অনেকটাই স্বচ্ছতা এসেছে। এ প্রকল্পে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেহেতু এসব প্রকল্পে দুর্নীতি নতুন নয়; শুরু থেকেই চলে আসছে_ বর্তমান সরকার সেই দুর্নীতির লাগাম অনেকটাই টেনে ধরেছে।' তার অভিমতকে আন্তরিকতার প্রকাশ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রকল্প নির্বাচন থেকে বরাদ্দের ধরন ও হিসাব পেশের পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা না গেলে এ অনৈতিক ধারা যে চলতে থাকবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ কম। ওপর থেকে তৃণমুল পর্যায় পর্যন্ত অনিয়ম-দুর্নীতির যে চেইন তৈরি হয়েছে সেটা ভেঙে ফেলতে হলে প্রচণ্ড বাধা আসবে এবং তা মোকাবেলায় বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার জন্য প্রস্তুত থাকা চাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দিনবদলের সনদ নিয়ে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকার এখন পর্যন্ত তেমন রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় রাখতে পারেনি। ক্ষমতার শেষ বছরে সেটা রাখতে পারবে, এমন ভরসা কম। 'দলীয় কর্মী বাঁচানো এ প্রকল্প' যে কর্মীদের ধরে রাখার জন্য সুস্বাদু মুলা!
খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, টিআর-কাবিখা নিয়ে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। এগুলোর যথাযথ নিষ্পত্তি হোক এবং কোন ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা জানিয়ে দেওয়া হোক সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে_ এটাই প্রত্যাশা থাকবে। গ্রামীণ উন্নয়নের নামে চালু করা এ দুটি প্রকল্প চালু রাখতে হলে কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই। সেটা শুরু করার সদিচ্ছা সরকারের কাছে কি?
 

No comments

Powered by Blogger.