বিক্ষোভকারীরাই আগুন দিয়েছে ছাত্রাবাসে!

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। ভিডিওচিত্র ও একাধিক আলোকচিত্র দেখে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কমিটি ২৬ জন নেতা-কর্মীকে শনাক্ত করেছে।


তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি ভিডিওচিত্র ও একাধিক আলোকচিত্র দেখে ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগকারী হিসেবে জেলা ছাত্রলীগ ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীদের নামের একটি তালিকা করেছে। তাঁদের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ার ছক তৈরি করা হচ্ছে বলেও সূত্র জানায়।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ কাজ সম্পন্ন হলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সাক্ষ্য, ঘটনার ভিডিওচিত্র ও একাধিক আলোকচিত্র পর্যবেক্ষণ করে সূত্রটি জানায়, গত রোববার রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়া হয়। এর আগে ওই দিন বিকেলে এমসি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রথম দফায় ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মাঠের একাংশে চলছিল ‘রথমেলা’। খেলার মাঠের ঘটনা নিয়ে মেলার একটি স্টলে বৈঠকও হয়। বৈঠক চলাকালে সন্ধ্যার দিকে ছাত্রশিবিরের হামলায় ছাত্রলীগের একজন কর্মী আহত হয়েছেন মর্মে খবর পেয়ে ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন কর্মী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ছাত্রাবাসে গিয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীদের বিতাড়িত করে মেলায় ফিরে আসেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রনজিত সরকার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে দ্বিতীয় দফায় ছাত্রাবাসে ঢোকার মদদ দেন। পরে তৃতীয় দফায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রাবাসে ঢোকেন। এ সময় প্রথমে ছাত্রাবাসের ‘এ’ ব্লকে এবং পরে ‘সি’ ও ‘ডি’ ব্লকে আগুন দেওয়া হয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ার সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দেবাংশ দাসের নেতৃত্বে খণ্ড খণ্ড মিছিল চলছিল।
তবে ছাত্রশিবিরই ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে গেছে বলে গতকাল দাবি করছেন ছাত্রলীগের নেতা পংকজ পুরকায়স্থ ও দেবাংশ দাস। এর আগে দুজনেই প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা ছাত্রাবাসে আগুন দেখেছেন এবং সে সময় তাঁরা শিবিরবিরোধী বিক্ষোভ করছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতা রনজিত সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে আমি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঘটনার আগে ও পরে প্রায় এক সপ্তাহ আমি তাহিরপুরের হাওর এলাকায় ছিলাম। এখন আমার নাম যদি কেউ বলে, তার কি কোনো ভিত্তি থাকতে পারে? এ ধরনের ভিত্তিহীন প্রচারণা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা রটাতে পারে।’
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, অগ্নিসংযোগকারীদের ‘রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দুর্বৃত্ত’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে ছকও তৈরি করেছেন। পরবর্তী নির্দেশনা পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি বিএনপির
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন জেলা বিএনপির নেতারা। গতকাল দুপুরে আগুনে পোড়া ছাত্রাবাস পরিদর্শন শেষে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে দিয়েছে, তাদের বিচার না হলে নোংরা রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে।’ এ সময় জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মো. মখন মিয়া, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী, ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব এ টি এম ফয়েজ, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. ময়নুল হক ও সদর উপজেলা বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে গতকাল শনিবার ‘শিক্ষাঙ্গন রক্ষা পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন মানবববন্ধন করেছে। এ সময় সংগঠনের সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতা করেন এমসি কলেজের সাবেক শিক্ষক আহমদ হোসেন, বিএমএ সিলেটের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সিলেট চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি নাসিম হোসাইন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.