পাঠকের মন্তব্য-এখন বলবেন সব দোষ বিশ্বব্যাংকের!

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এই মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক
শনিবার সকালে অনলাইনে এই সংবাদ প্রকাশের পর বিপুলসংখ্যক পাঠক এটি পড়েছেন এবং তাঁদের মতামত দিয়েছেন। জয়নাল লিখেছেন: দুর্নীতির অভিযোগে সহযোগিতা করে সরকার নিজের পায়ে কুড়াল মারবে নাকি!
শফিক: সকালে বিবিসির প্রভাতী অনুষ্ঠান শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে তথ্য-প্রমাণ আর সরকার তা ভুল প্রমাণ করতে আশ্রয় নিচ্ছে চাপাবাজি আর গলাবাজির। তাই এ রকম একটা খবর যে শুনতে হবে, তা অনুমান করা যাচ্ছিল।
পঙ্কজ নাথ: শেষ পর্যন্ত সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশ বেইজ্জত হলো। এর দায় প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তিনি তাঁর দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিশ্বব্যাংককে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দিয়েছেন।
মো. হাবিবুর রহমান খান: খুবই বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে লজ্জায় ফেলে দিল সরকার। এর দায় অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর।
কুদ্দুস: আমাদের উন্নয়নের বড় বাধা দুর্নীতি। দু-একজনের জন্য লক্ষ-কোটি মানুষকে কষ্ট ও দুর্নীতির অভিশাপ সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কারণ, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক যে সুবিধা দিতে পারত, অন্য কোনো বিনিয়োগ তার চেয়ে অনেক চড়া মূল্যে ও কঠিন শর্তে মেনে নিতে হবে। আর এটা যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হলো, তা স্পষ্ট। তবে আফসোস লাগে, যখন সরকারের লোকজন ঢোল বাজায় ‘আমরা চোর না’ বলে।
রাশেদ আহমেদ: পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া মন্ত্রী-আমলাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করেছে, এ ঘটনা দেশের ১৬ কোটি মানুষ অন্তত ১৬ বছর মনে রাখবে।

এটি আমাদের কাছে বজ্রাঘাতের মতো
বিশ্বব্যাংকের চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সম্পর্কে এ কে এম সেরাজ লিখেছেন: বিশ্বব্যাংক আপনাদের নাটক দেখার জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করবে নাকি?
নায়িহান সালেহিন: দুর্নীতি আড়াল করার কলাকৌশল দিয়ে দেশবাসীকে বোকা বানাতে পারলেও বিশ্বব্যাংককে বোকা বানিয়ে রাখা যাবে না, তা সরকারের বোঝা উচিত ছিল। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই কেবল ভবিষ্যতে এ-জাতীয় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
মাহফুজা বুলবুল: এখন বলবেন সব দোষ বিশ্বব্যাংকের! সব কি আপনাদের দলীয় প্রতিষ্ঠান ভেবেছেন?
এইচ এম আশিক এলাহি: এটি আপনাদের কাছে বজ্রাঘাতের মতো হলেও সাধারণ মানুষের কাছে নয়। কারণ, আমরা তো দেখছি যে কীভাবে কী হচ্ছে।
আমজাদ খান: এটা আওয়ামী সরকারের মাথায় বজ্রাঘাত নয়, পুরো জাতির মাথায় বজ্রাঘাত। সামনের নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা দরকার, যাতে আসমানটা হাতের কাছে পাই!
আব্বাস আলি: আপনারা বাস্তবতাটা বুঝতে পারেননি। আপনারা ভেবেছিলেন, দুদক সবুজ-সংকেত দেবে—আর সব ঠিক। দুদকের প্রতিবেদন যে বিশ্বব্যাংক মানবে না, তা বুঝতে পারেননি।

‘ওপরের নির্দেশে’ দুদকে সাংবাদিক নিষিদ্ধ!
গত শুক্রবার এ খবর প্রকাশের পর রাসেল আহমেদ লিখেছেন: দুদকের দোষ দিয়ে কী লাভ? তাদের হাত-পা তো বাঁধা। সরকারের কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা কি তারা বলতে পেরেছে কখনো? বিরোধী দলকে নিয়ে তারা ফুটবল খেলতে পছন্দ করে।
এম শওকত আলি: দুদক কুইনাইনের কাজ করে বলে লোকে জানে। কিন্তু প্রবাদ আছে, কুইনাইন রোগ সারালেও কুইনাইন সারাবে কে? দুদক এ পর্যন্ত দুর্নীতির কোনো মামলায় জয়ী হয়েছে বা দুর্নীতিবাজ কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে—এমন উদাহরণ নেই। দুদক বাস্তবিকই ‘নখদন্তহীন বাঘে’ পরিণত হয়েছে। তবে এ জন্য দুদকের চেয়ারম্যান কতটুকু দায়ী, তা জনগণ ভালো করেই লক্ষ করছে। প্রকৃতপক্ষে ‘গৃহপালিত’ বাঘ যেমন বনের পশু শিকার করতে পারে না, তেমনি এই নখদন্তহীন বাঘ সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধ করার চেয়ে সাহসী কাজ কীভাবে করবে?
সওগাত আলী সাগর: প্রতিটি অফিসের নিজস্ব নিয়মকানুন থাকে, সেই নিয়মকানুনকে সম্মান দেখিয়ে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। দুদক, এসইসি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এসব জায়গায় সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া না-দেওয়াকে ইস্যু বানানো দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নয়।

এত সস্তা বিদ্যুৎ পৃথিবীর আর কোথাও নেই
সংসদে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের ব্যাপারে পাঠকেরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রায়হানুল ইসলাম লিখেছেন: কোন কোন দেশের বিদ্যুতের দামের খবর আপনারা নিয়েছেন, এটি জানালে খুব ভালো হতো।
মো. আবদুল্লাহ-আল-মাসুদ: প্রধানমন্ত্রী, আপনি বলেছেন যে সবচেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ কেবল বাংলাদেশেই পাওয়া যায়। তার মানে হলো, বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়াতে হবে। কিন্তু কোন দেশ বছরে চার-পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়ায়?
রুবেল রাজ: যুক্তরাজ্যে পে অ্যান্ড গো পদ্ধতি চালু আছে। কার্ড রিচার্জ করবেন তো বিদ্যুৎ আপনার আছে। আর কার্ড রিচার্জ করবেন না, মানে ইলেকট্রিক কার্ডে টাকা রাখবেন না, তাহলে বিদ্যুৎ পাবেন না। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে কার্ড (পে অ্যান্ড গো) সিস্টেম করা যায় কি?
মাহতাফ হোসেন: আমাদের দেশে বিদ্যুতের দাম কম। উন্নত বিশ্বে বিদ্যুতের দামসহ সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী—এটা ঠিক। আমরা আমজনতা এটা কমবেশি স্বীকার করি। এটা আপনি আমাদের সামনে উত্থাপন করতেই পারেন কিন্তু এটা ‘ব্যয়’-এর দিক এবং এটার সঙ্গে যেটা সম্পর্কযুক্ত, সেই ‘আয়’-এর দিকটায় তো আলোকপাত করলেন না। উন্নত বিশ্বে মানুষের ব্যয় যেমন বেশি, তাদের আয়ও সেই অনুপাতে ধার্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কী দেখি? ঢাকা শহরে বসবাসকারী সরকারি অফিসে কর্মরত একজন পিয়ন সাকল্যে ছয়-সাত হাজার টাকা বেতন পান। তাঁর পক্ষে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা কীভাবে সম্ভব? আমাদের আমজনতার কথা, যারা আপনার কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পাই না, তাদের অবস্থা একটু ভাবুন তো। তারা এখন আর আদৌ দুই চোখে ‘সর্ষে ফুল’ দেখতে পায় কি না!

তত্ত্বাবধায়ক-প্রশ্নে গণভোট হোক
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর গত বৃহস্পতিবার তাঁর আজ-কাল-পরশু কলামে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। এ সম্পর্কে নোমান লিখেছেন: তত্ত্বাবধায়ক-প্রশ্নে গণভোট হোক, ৯৯ শতাংশ ভোট পাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার!
মামুন আহমেদ: আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিপক্ষে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা আমি এখনো ভুলিনি। আমি আওয়ামী সরকারের অধীনেও নির্বাচন চাই না। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সৎ ব্যক্তিদের নিয়ে এবং সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার হলে ভালো হয়।
ইমাম হোসেন: অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। আমরা সাধারণ মানুষ হয়তো কোনো দলকে সমর্থন করি, কিন্তু হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে যদি এই ইস্যুটির সুন্দর সমাধান হয়, তবে তা অবশ্যই মেনে নেব। তবে হ্যাঁ-না ভোট কোন সরকারের অধীনে হবে, সেই কথাও আলোচনায় আসতে হবে। কারণ, আমাদের রাজনৈতিক আচরণ অবিশ্বাসে ভরপুর। তবে প্রস্তাবটি সময়োপযোগী।
জালাল আহমেদ: আপনাদের লেখায় প্রতিটি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলে নিজেদের গুরুত্ব জাহির করা বাদ দিয়ে দেন। ’৯১ থেকে প্রতিবারই দেখেছি, আপনারা লিখছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কিন্তু সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা নির্বাচনের গুরুত্ব হাড়ে হাড়ে টের পাই আর প্রহর গুনতে থাকি—কবে তাদের পাঁচ বছর শেষ হবে। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে পরের বার নির্বাচন করি এবং আরও একটি পূর্বাপেক্ষা ভয়ংকর যুগে প্রবেশ করি। আমরা এখন প্রহর গুনি গণতান্ত্রিক লেবাসের এই একনায়কতন্ত্রের আর দরকার নেই। একনায়ক হলে তার সব কাজই শুদ্ধ হবে—এই ভাবখানা প্রথম থেকেই থাকবে। ফলে নিরাশার এই সাগরে হাবুডুবু অন্তত আর খেতে হবে না।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.