সেবামূলক প্রতিষ্ঠান-ইউনিয়নের স্বেচ্ছাচারিতা নয়

সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর নতুন কিছু নয়। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও এই চরম ক্ষতিকারক ব্যাধির হাত থেকে রেহাই পায় না। এভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়নের নামে একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারী নেতার আঙুল ফুলে কলাগাছ বনার ব্যাপারটা এখন ওপেন সিক্রেট।


তাদের দাপট সব রাজনৈতিক সরকারের আমলে প্রায় একইরকমভাবে চলে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে কেবল নেতা ও ইউনিয়নের রেজিস্ট্র্রেশন নম্বর বা নাম বদল হয় মাত্র। কমিশন বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য, প্রমোশন বাণিজ্য এবং বিভিন্ন খাতে দুর্নীতিসহ হরেক রকমের টুপাইস কামানোর ধান্ধার কিন্তু পরিবর্তন হয় না। ডিসিসি, ওয়াসা ও রাজউকে কর্মচারী সংগঠনের নামে কীভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির রাহুগ্রাস চলছে তার একটা সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি গতকাল প্রকাশিত সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় এক রিপোর্টে বিবৃত হয়েছে। এ সম্পর্কে কয়েকজন কর্মচারী নেতাকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বরাবরের মতোই ভালোমানুষ সাজার চেষ্টা করেছেন। ইউনিয়নের কাজ কর্মচারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা_ এই আপ্তবাক্যের বাইরে তারা একবাক্যে অভিযোগগুলোকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। অথচ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন নেতার বাড়ি, গাড়ি, নগদ অর্থসহ বিপুল সম্পদের কথা সবার গোচরীভূত হয়। তারা আসলে রাজনৈতিক সরকারের ছত্রছায়ায় সাধারণ কর্মচারীদের শিখণ্ডী হিসেবে ব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক বনে যায়। আর তাদের ম্যাসলপাওয়ারের দাপটে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাই টুঁ শব্দটি করতে সাহস পান না।
শ্রমিক-কর্মচারী স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইউনিয়ন থাকা অনুচিত নয়। তবে তাদের কাজ অবশ্যই হতে হবে শ্রমিক-কর্মচারী স্বার্থকেন্দ্রিক। কিন্তু আমাদের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এসব ইউনিয়নকে নানাভাবে ব্যবহার করায় সংগঠনগুলোর নেতারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত আখের গোছানোর মওকা পান। রাজউক, ওয়াসা ও ডিসিসিতে আজ যেভাবে ইউনিয়নের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে এবং তাদের দাপটের কারণে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে ধরনের নৈরাজ্য কায়েম হয়েছে, তা অবিলম্বে জনস্বার্থেই বন্ধ হওয়া উচিত। তাদের কর্মকাণ্ডে জনসেবার কাজও কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ ব্যাপারে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত।
 

No comments

Powered by Blogger.