সেরা রাঁধুনী পুরস্কার-যিনি চুল বাঁধেন, তিনি রাঁধেনও

কোনো রকম ভূমিকার আশ্রয় না নিয়েই আমরা 'স্কয়ার' আয়োজিত 'সেরা রাঁধুনী পুরস্কার' বিজয়ী তিন রন্ধনশিল্পী ফেরদৌস জাহান পাবন, জোবাইদা বেগম ও হুমায়রা রায়হান খানকে অভিনন্দন জানাই। বাঙালির অনেক সুনাম এখন বিবর্ণ, অনেক সুনাম লুপ্তপ্রায়। এ নিয়ে আমাদের মর্মবেদনা কম নয়।


তবে যে দু'চারটি ক্ষেত্রে বাঙালি তার গৌরবের দীপশিখা এখনও ম্লান হতে দেয়নি, এর একটি হচ্ছে রন্ধনশিল্প। আমাদের সাহিত্যের প্রায় সূচনালগ্ন থেকেই খাদ্যসামগ্রীর প্রতি বাঙালির অশেষ দুর্বলতার কথা নানাভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
বই পড়ে রান্না শেখার ক্ষেত্রে বাঙালি রমণীদের কাছে যে নামটি অনেকটা প্রবাদতুল্য তিনি সিদ্দিকা কবীর। তিনি আমাদের মাঝে নেই। আছে তার জনপ্রিয় রান্না শেখার বই 'রান্না, খাদ্য ও পুষ্টি'। এমন জনশ্রুতিও শোনা যায়, বিয়ের পর শ্বশুরালয়ে কন্যাকে পাঠানোর সময় অনেক উপহার সামগ্রীর সঙ্গে মা সিদ্দিকা কবীরের বইটি দিতে ভোলেন না। উদ্দেশ্য এই বইটি পড়ে মেয়ে যেন ভালো রেঁধে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির মন জয় করতে পারে।
সন্তানকে 'দুধে-ভাতে' রাখার বাঙালি মায়ের ইচ্ছা তো প্রবাদতুল্য। কঠিন বাস্তবতায় অতীতের অনেক সুখের স্থানটি আমাদের দৃষ্টিসীমায় ক্রমশ আবছা হয়ে উঠলেও খাদ্যসামগ্রীর প্রতি বাঙালির দুর্বলতা, আরও সহজ করে বলা যায় ভোজনবিলাস এখনও আমাদের চরিত্রের একটি মধুর অনুষঙ্গ হয়েই রয়েছে। 'যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে'_ এই প্রবচনটি ঈষৎ ঘুরিয়ে বলা যায়, যে চুল বাঁধে সে রাঁধেও। এমনকি 'স্ত্রী-ভয়ে ভীত' পুরুষরাও নিরাপদ দূরত্বে থেকে এ কথা মাঝে মধ্যেই বলেন, বিশ্বের সেরা রন্ধনশিল্পী নারী নয়, পুরুষ। তারা পাঁচতারা হোটেলের 'চিফ শেফে'র দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। রান্নাবান্না যে এখন রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে পেঁৗছে গেছে, তা আমাদের প্রিয় টেলিভিশনের খাবার সম্পর্কিত অনুষ্ঠান দেখেই বুঝতে পারি। একদা নিস্পৃহ ও নিরানন্দ এই অনুষ্ঠানে প্রমোদের নানা উপকরণ যুক্ত হওয়ায় তা দারুণ জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিদেশে ২৪ ঘণ্টার 'ফুড চ্যানেল' তো খুবই জনপ্রিয়। একদিন আমরাও হয়তো ২৪ ঘণ্টার 'ফুড চ্যানেল' দেখতে পাব। রান্নাবান্নার কথা বলতে গিয়ে আমরা কী খাচ্ছি তাও বলতে হয়। ভেজাল খাবার, ফরমালিনের মতো বিষ মেশানো খাবার আমাদের জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ, বিশেষ করে মায়েদের জন্য এ এক বড় ধরনের দুশ্চিন্তার বিষয়। এহেন বাস্তবতায় মোটামুটি নির্ভেজাল ও ঝুঁকিমুক্ত খাবার তৈরিতে আমাদের গৃহবধূরা যত বেশি আগ্রহী হবেন ততই মঙ্গল। যারা গুণী বিচারকদের বিবেচনায় এবার স্কয়ারের 'সেরা রাঁধুনী' বিবেচিত হয়েছেন, তাদের আবারও সাধুবাদ।
 

No comments

Powered by Blogger.