নির্বাচনী প্রচার চালাতে হলে চাকরি ছেড়ে তা করুন-এলজিইডির প্রকৌশলীর রাজনীতি

একজন রাজনীতিবিদ অন্যজন সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা বন্ধু হতে পারেন কিন্তু রাজনৈতিক সহযোগী হতে পারেন না। দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এলাকায় সেতু নির্মাণের বাইরে প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমানের আর কোনো কাজ থাকার কথা নয়।


কিন্তু তিনি দিয়েছেন রাজনৈতিক বক্তৃতা, মাননীয় মন্ত্রী এবং তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী আপত্তি করলেন না, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডিই) প্রধান প্রকৌশলী সরকারি কর্মকর্তার আচরণবিধির পরোয়া করলেন না। সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুই কর্তার এই বিধি লঙ্ঘনের প্রতিকার কে করবে তাহলে?
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ভালো করেই জানেন কী করা যায় আর কী করা যায় না। মাননীয় মন্ত্রী সংবিধানবিশারদ ও আইনজ্ঞ; তাঁরও সরকারি আচরণবিধি না জানার কথা নয়। সে কারণেই জেনেশুনে করা অনিয়মের থেকে খারাপ কিছু আর হয় না। আইন, বিধি ইত্যাদি তুচ্ছ করার এই মানসিকতাকেই স্বৈর মানসিকতা বলা হয়। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য এর থেকে খারাপ কিছু আর হয় না।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন। সেই নির্মাণকাজের উদ্বোধনের নামে কার্যত তিনি রাজনৈতিক প্রচারেই নেমেছিলেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন প্রধান প্রকৌশলী মহাশয়কে। সেখানে মন্ত্রীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালানো থেকে এও মনে করার অবকাশ থাকে যে, খোদ সেতুটিই আসলে সরকারি ব্যয়ে নির্বাচনী বিনিয়োগের বেশি কিছু না। প্রধান প্রকৌশলীর উপস্থিতি এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দানে এ অভিযোগটিই প্রমাণিত হয়।
ঘটনাটি নতুন নয়। হরহামেশাই সরকারি কর্মকর্তারা এভাবে নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হন এবং তার মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব তো নিজের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারই শুরু করে দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের আমলেও প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের এ রকম রাজনৈতিক রঙ্গে রঞ্জিত হতে দেখা যায়। রাষ্ট্রের কর্মচারীদের রাষ্ট্রীয় দায়দায়িত্ব মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার রয়েছে, প্রশাসনিক বিধিমালা রয়েছে। তাঁরা যদি সেটা না করেন, তাহলে এসব কাগুজে বিধিমালা রাখার প্রয়োজন কী?

No comments

Powered by Blogger.