কৃষিঋণ বিতরণ-সব ব্যাংকের হিস্যা বাড়ূক

বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট ঋণের অন্তত আড়াই শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ সময়োপযোগী বলেই আমরা মনে করি। বাংলাদেশের দেশজ উৎপাদনে কৃষির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থানের প্রধান খাতও এই কৃষি। সর্বোপরি রয়েছে খাদ্যনিরাপত্তা বিধানের ইস্যু।


দেশের লোকসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং আমাদের সৌভাগ্য যে, কৃষি খাত বাড়তি মুখের খাদ্য জুগিয়ে চলেছে। এমন একটি খাতে ঋণ জোগাতে কোনো ব্যাংকেরই আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে একটু নয়, অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অথচ তাদের হাতেই এখন ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের দুই-তৃতীয়াংশ। মোট ঋণের সিংহভাগও তারাই বিতরণ করে থাকে। তাহলে কৃষি খাতে ঋণ প্রদানে তারা কেন পিছিয়ে থাকবে? বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় মোট ঋণের অন্তত আড়াই শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণের কথা বলা হয়েছে। কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট খাতের চাহিদার তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা সামান্য। শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, ব্যবসায়িক স্বার্থেও বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর এ খাতে ঋণ প্রদান বাড়ানো উচিত। এটা সহজ কথা যে, অর্থনীতির আকার যত বড় হবে ব্যাংকের ব্যবসা তত বাড়তে থাকবে। কৃষকরা যুগ যুগ ধরে মহাজনের দ্বারস্থ হতো ঋণের জন্য। সে অবস্থার বহুলাংশে পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো তাদের কাছে জমা পড়া অর্থ থেকে একটি অংশ কৃষি খাতে ঋণ হিসেবে দিলে অর্থনীতির ভিত আরও জোরালো হবে, কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটবে। এটা ঠিক, এসব ব্যাংকের কার্যত কোনো শাখাই কৃষকদের আবাস ও কর্মস্থল অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলে নেই। এ ধরনের শাখা খোলার নির্দেশনাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে দেওয়া হচ্ছে। তবে শাখা খোলার কাজ বিলম্বিত হলেও ব্যাংকগুলো চাইলেই কৃষিঋণ বিতরণের জন্য বিকল্প উদ্ভাবন করতে পারে। তারা ঋণের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অথবা অন্য কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে বিতরণের জন্য তুলে দিতে পারে। এমনকি বেসরকারি কোনো সংগঠনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগও তাদের রয়েছে। শাখা না খুলেও ঋণ বিতরণ ও আদায়ের জন্য তারা বিভিন্ন এলাকায় বুথ চালু করতে পারে। কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৃষি খাতের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়াবে, এটাই প্রত্যাশিত। এ ক্ষেত্রে কোনো ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়। ব্যাংকগুলো অবশ্যই লাভের দিকটি বিবেচনায় রাখবে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির লাভের বিষয়টিও তো বিবেচনায় রাখতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.