কমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ-মহাখালীতে যুবলীগ অফিসে হামলায় তিনজন গুলিবিদ্ধ

রাজধানীর মহাখালীতে গতকাল রবিবার ঢাকা মহানগর (উত্তর) ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়ে ঢুকে গুলি চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ওই ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন (৩২), সদস্য মোহাম্মদ আলী (৩৪) এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মহসিন নয়ন (৩১)। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অস্ত্রধারীরা গুলি চালিয়ে হেঁটে চলে যায়।


পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কোন্দলের জের ধরে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ জাকির বনানী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। ওই পদের আরেক প্রার্থী সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেল গ্রুপ এ হামলা চালিয়েছে।
হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। থানায় মামলাও দায়ের হয়নি। তবে ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে মহাখালী রেলগেট এলাকায় প্রতিবাদ সভা করেছে মহানগর যুবলীগ (উত্তর)। ঘটনার পর মহাখালী রেলগেট এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মহাখালী রেলগেটের ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়ে এ হামলা হয়। আগামী ৮ জুলাই মহানগর যুবলীগের (উত্তর) সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে যুবলীগের জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের জন্য গতকাল ওয়ার্ড কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা চলছিল। এ সময় ছয়-সাতজনের একটি দল কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে অন্তত ৯টি গুলি ছুড়ে চলে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ফেলে পালিয়ে যান দোকানিরা। গুলিবিদ্ধ তিনজনকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা। একটি গুলি জাকিরের বাঁ পাঁজরে বিদ্ধ হয়। নয়নের বাঁ হাতে দুটি ও বাঁ পায়ে একটি এবং মোহাম্মদ আলীর পেটের বাঁ পাশে একটি গুলি বিদ্ধ হয়। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মোহাম্মদ আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত।
২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইমরুল ইসলাম সুমন জানান, অস্ত্রধারীরা গুলি করে সামনের প্রধান রাস্তা পার হয়ে দৌড়ে চলে যায়। তিনি দাবি করেন, যুবলীগ নেতা সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলের গ্রুপ এ হামলা চালিয়েছে। আহত জাকির বলেন, 'এ ব্যাপারে এখনই সব বলা যাবে না। তবে সোহেলের লোক গুলি করেছে।'
স্থানীয় ও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সম্মেলনের আগে বনানী থানার কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন জাকির, সোহেলসহ চার-পাঁচজন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আগে থেকেই মহাখালী বাস টার্মিনাল, কাঁচাবাজার এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গার নিয়ন্ত্রণ এবং টেন্ডারসহ নানা বিষয়ে স্থানীয় যুবলীগের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) লুৎফুল কবির চৌধুরী বলেন, 'অভ্যন্তরীণ কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যেই এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়েছে। কারণ আলামত দেখে মনে হচ্ছে, সন্ত্রাসীরা চাইলে সরাসরি গুলি করে তাঁদের হত্যা করতে পারত। জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
রেলগেটের অদূরে মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের ভেতরে টেবিলে চারটি গুলি লাগার ছিদ্র। মেঝেতে কিছু জায়গাজুড়ে রক্ত শুকিয়ে রয়েছে। দুপুরেই পুলিশ কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করে দেয়। পাশের ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের কার্যালয়টিও তালাবদ্ধ দেখা যায়। ভয়ে আশপাশের দোকানদাররা কিছুই বলতে চাইছেন না। তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, গুলির শব্দ শোনার পর অফিস থেকে কয়েকজনকে সামনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। এর মধ্যে দু-তিনজন ওই অফিসে আসা-যাওয়া করে।
ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সভাপতি আবুল বাশার বলেন, 'ঘটনাটি কী কারণে ঘটেছে তা আমরা দেখব। আহতরা আগে সুস্থ হোক। তবে কোনো কোন্দল কি না জানি না।'
২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ফারুকুল ইসলাম (ফারুক) বলেন, 'আমি বাইরে ছিলাম। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা জানি না। তবে অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই।'

No comments

Powered by Blogger.