সাক্ষাৎকার-অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি মানতে সরকার বাধ্য হবে by মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : লোটন একরাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। এর আগে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন তিনি। কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদেও ছিলেন। ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।


ছাত্রত্ব শেষে বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। একপর্যায়ে সরকারি চাকরি ছেড়ে যোগ দেন বিএনপির রাজনীতিতে। প্রথমে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান। পরে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। ২০০১-০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় কৃষি ও বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সমকালের সঙ্গে তিনি সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন

সমকাল : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়িতে অগি্নসংযোগ ও সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় ২৮ দিন কারাভোগের পর আপনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বন্দি দিনগুলোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন?
ফখরুল : প্রথমত, আমাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দুটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে যে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং অন্যায় করলে সেটা দেখে আটক করা সম্ভব। আর সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার এফআইআরে দুটি মোটরসাইকেলে করে অজ্ঞাতপরিচয় যুবকরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও সরকার ১১ জুনের সমাবেশ পণ্ড করতেই সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করেছে। স্বাধীনতার পর কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মহাসচিবসহ বিপুলসংখ্যক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে এখন অত্যাচার ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। এদের কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ নেই। অবশ্য এতে সরকারেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বন্দি দিনগুলোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলব, এ সময়ে অফুরন্ত অবসর সময় পাওয়া যায়। পড়াশোনার সুযোগ থাকে। আমি যতটুকু সম্ভব হয়েছে, সে সুযোগ নিয়েছি। বই পড়ে সময় কাটিয়েছি।
সমকাল : মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? শীর্ষ নেতা হিসেবে আপনাদের আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে মনে করেন কি?
ফখরুল : অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী, পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতাদেরও গ্রেফতার এড়াতে হয়েছে। অবশ্য এটা দলের এবং রাজনৈতিক প্রয়োজনে হয়েছে।
সমকাল : একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করায় সরকারি দলসহ অনেকে বলছেন, আপনারা 'ভয়' পেয়ে গেছেন। সে জন্য আপাতত কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। আপনার বক্তব্য কী?
ফখরুল : প্রতিটি আন্দোলনেরই বিভিন্ন পর্যায় থাকে। আন্দোলনের গতি পরিবর্তন হয়। এ প্রসঙ্গে মাও সে তুংয়ের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। তিনি বলেছেন, 'প্রয়োজনে এক পা এগোনোর জন্য দু'পা পেছাতে হয়।' একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেফতারে আমরা মোটেই ভয় পাইনি। এর প্রমাণ ১১ জুনের সমাবেশ। শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আরও বেশি উজ্জীবিত হয়েছেন। দলের ঐক্য সুদৃঢ় হয়েছে। আন্দোলন বেগবান হয়েছে।
সমকাল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল বা অন্য যে কোনো নামে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে বিএনপির এত আগে আন্দোলনে নামা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। দেরিতে হলেও আপনারা সে বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই কি সরকারকে আবারও ঈদ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন?
ফখরুল : সংবিধান সংশোধন করে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়_ প্রতিবাদে তখনই আমরা আন্দোলন শুরু করি। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হিসেবে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ইস্যুতে আন্দোলন করছি। প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। সঠিক সময়ে এটা 'পূর্ণাঙ্গ রূপ' পাবে।
সমকাল : নাকি সরকারের কঠোর মনোভাব দেখে দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা ও নির্যাতন থেকে রক্ষা করতেই 'ধীরে চলো নীতি' গ্রহণ করেছেন? অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, বিদেশিদের চাপে আপনারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
ফখরুল : বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট তাদের লক্ষ্যে পেঁৗছানোর জন্য যখন যে ধরনের আন্দোলন প্রয়োজন, সেটাই করবে। এটা কারও ভয়ে বা চাপে নয় এবং অন্য কোনো কারণেও নয়। এটা আন্দোলনের কৌশল।
সমকাল : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইস্যুতে সংলাপের ব্যাপারে পর্দার আড়ালে সরকারি দলের পক্ষ থেকে আপনাদের সঙ্গে 'অনানুষ্ঠানিক' কোনো কথাবার্তা হচ্ছে কি?
ফখরুল : না, আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাই হচ্ছে না।
সমকাল : বিদেশিরা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিচ্ছে। সংলাপের ব্যাপারে শিগগির বিদেশি কূটনীতিকদের 'দূতিয়ালি' শুরু করার সম্ভাবনা আছে কি?
ফখরুল : আমার জানা নেই।
সমকাল : প্রধানমন্ত্রী সংশোধিত সংবিধানের আলোকেই দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন। আপনারা কি এ প্রস্তাব মানবেন?
ফখরুল : সরকারের কাছ থেকে আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব পাইনি। আগে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসুক। এরপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সমকাল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কোনো ফর্মুলা থাকলে আপনাদের সংসদে এসে প্রস্তাব দিতে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এতে সাড়া দিচ্ছেন না কেন?
ফখরুল : সংসদে গিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক এখনও কোনো প্রস্তাব পাইনি। তা ছাড়া সংসদে সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আমরা আগে কোনো প্রস্তাব দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকারি দল তা নাকচ করে দেবে। আর সরকারি দল যে সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে সেটাই পাস করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইস্যুতে আগে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত হোক। তারপর সংবিধান সংশোধনের জন্য বিএনপি সংসদে যেতে পারে।
সমকাল : একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করে এখন আবার পুনর্বহাল করার ব্যাপারে আপনাদের কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেওয়াকে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির 'দ্বৈতনীতি' বলে আখ্যায়িত করছে...।
ফখরুল : তখনকার আর এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যেখানে বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, কর্মসূচি ঠেকাতে বাস-লঞ্চ বন্ধ করে দিচ্ছে, এমনকি মানববন্ধন কর্মসূচিতেও লাঠিপেটা করছে; সেখানে তাদের কাছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না।
সমকাল : শেষ পর্যন্ত সরকারি দল যদি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে রাজি না হয়, তাহলে কী করবেন?
ফখরুল : এ দেশের জনগণ যা চায়, অবশ্যই তা বাস্তবায়িত হয়। সরকারকেও তা মেনে নিতে হবে।
সমকাল : জাতীয় পার্টিসহ ছোট ছোট অনেক দলকে নিয়ে যদি সরকার নির্বাচন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন 'প্রতিহত' করার মতো সাংগঠনিক শক্তি কি বিএনপি জোটের আছে?
ফখরুল : বিএনপি একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল। ইতিপূর্বে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে একাধিকবার সরকার গঠন করেছে। এখনও জনগণের যে কোনো আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার মতো শক্তি রয়েছে বিএনপির।
সমকাল : কিন্তু বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের আড়াই বছর পরও বেশ কয়েকটি জেলা ও মহানগরে এখনও নতুন কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না কেন? অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল কি নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না?
ফখরুল : বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে, যা সব দলেই থাকে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ মহানগর ও জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। ২-৩টি জেলা বাকি রয়েছে। শিগগির সেগুলো হয়ে যাবে।
সমকাল : সম্প্রতি সংসদীয় দলের সভায় আওয়ামী লীগের জরিপ রিপোর্টের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২৫ সাংসদের বিজয়ের ব্যাপারে আশঙ্কা ব্যক্ত করে সতর্ক করে দেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
ফখরুল : এটা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় কী পরিমাণ ধস নেমেছে। সরকারের তিন বছর পূর্তিতে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের জরিপেও জনপ্রিয়তায় ধসের চিত্র উঠে এসেছে। নিরপেক্ষ জরিপ চালালে দেখা যাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, তারা ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তারা। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এখন আর কোনো অর্থই ছাড় করছে না তারা। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের সংকট নিরসন করতে পারছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। সারাদেশে হত্যা, গুম, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। টেন্ডারবাজি নিয়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা নিজেরা গোলাগুলি করছে। আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে বুঝতে পেরেই নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। তবে শেষ পর্যন্ত জনগণের আন্দোলনের মুখে দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিটি মানতে সরকার বাধ্য হবে।
সমকাল : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির প্রস্তুতি কেমন চলছে?
ফখরুল :আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন দলকে শক্তিশালী করছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিকেও এগিয়ে নিয়ে চলছে।
সমকাল : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, সরকার ১৮ দলীয় জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে আপনাদের হাতে কি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ আছে? আপনি সম্প্রতি জোটের পরিধি আরও বৃদ্ধির কথা বলছেন_ উল্লেখযোগ্য কোন দল জোটে আসছে?
ফখরুল :১৮ দলীয় জোট গঠনের সময় প্রারম্ভিক কাজ শুরু হলে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পত্রপত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিতও হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। যেদিন ১৮ দলীয় জোট ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিনই জোটের পরিধি বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন জোট নেত্রী খালেদা জিয়া। অনেকে ১৮ দলীয় জোটে আসবেন। তবে এ মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট করে নাম বলার সময় আসেনি।
সমকাল : সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া 'পেছনের দরজা' দিয়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছেন। এ অভিযোগের সত্যতা কতটুকু?
ফখরুল : এ বিষয়ে ওনাদের (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অভিজ্ঞতা ভালো। এ দেশে সবগুলো সামরিক সরকারকেই ওনারা স্বাগত জানিয়েছেন। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছেন, 'আই এম নট আনহ্যাপি।' এমনকি ২০০১ সালে মইনুদ্দিন ও ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকারকে বলেছেন, 'এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।'
সমকাল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের সুযোগ 'তৃতীয় পক্ষ' নেওয়ার আশঙ্কা করেন কেউ কেউ। আপনার অভিমত কী?
ফখরুল : আমরা কখনও চাই না, অরাজনৈতিক শক্তি প্রবেশ করুক। সরকারের দায়িত্ব সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা। আমরা এখনও আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। মানুষের চোখের ভাষা ও দেয়ালের লিখন পড়বে এবং নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অত্যাচার-নির্যাতন ও নিপীড়ন করে সরকার নিজের এবং দেশ ও জনগণের ক্ষতি করছে।
সমকাল : জোটের শরিক জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুকবুল আহাম্মদসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও তারা ১১ জুনের সমাবেশে এসে বক্তব্য দিয়ে কেটে পড়েন। বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করার রহস্য কী?
ফখরুল : না, এটা কোনো রহস্য নয়_ রাজনৈতিক কৌশল। অত্যাচার-নির্যাতন চালালে যুগ যুগ ধরে এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হয়। এখানে অন্য কোনো রহস্য আছে বলে আমি মনে করি না।
সমকাল : রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির নেতারা ভিন্ন ভিন্ন মত ব্যক্ত করছেন। আসলে বিএনপির প্রকৃত অবস্থান কী?
ফখরুল : রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপি দলীয়ভাবে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আমি মনে করি, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি মানবিক হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে বিরোধী দলসহ সব দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
সমকাল : দলের ভেতর ও বাইরে অনেকে বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়া উচিত বলে মত দিচ্ছেন। এরপরও আপনারা সংসদে যোগ দিচ্ছেন না কেন?
ফখরুল : আমরা সংসদে যোগ দিতে চাই। কিন্তু সরকারি দল এমন আচরণ করে যাতে আমরা সংসদে থাকতে না পারি। এরপরও আমরা একেবারেই সংসদে যাব না বলছি না। সংসদে কথা বলতে না দেওয়ার প্রতিবাদস্বরূপ আপাতত অধিবেশনে যোগদান থেকে বিরত রয়েছি।
সমকাল : দুই মাস পরও দলের 'নিখোঁজ' নেতা এম ইলিয়াস আলী উদ্ধার হননি। টানা কয়েকদিন হরতাল করলেও বিষয়টি এখন চাপা পড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনাদের পরবর্তী করণীয় কী?
ফখরুল : ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ইলিয়াসসহ যারা গুম হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার ইলিয়াসকে উদ্ধারে কিছুই করতে পারেনি। এরপরও সরকারকে বলছি, ইলিয়াস আলীকে জীবিত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দিন। অন্যথায় এসব গুমের পরিণতি শুভ হবে না।
সমকাল : দলের কয়েকজন নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রতিনিয়ত 'ভুল' বোঝাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন? এরা কারা?
ফখরুল : এ বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয়।
সমকাল : খালেদা জিয়া পুরনো বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেন না বলে অনেকেই মনে করছেন। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
ফখরুল : খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সরকারের চক্রান্ত প্রতিহত করতে দল এখন অনেক বেশি সুসংগঠিত। রাজনীতি এখন অনেক বাস্তবধর্মী।
সমকাল : বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ফখরুল : বিএনপি দুর্নীতিবাজ, ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ঈদের পর আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। ঈদের আগে পর্যন্ত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো পালন করবে। এ মুহূর্তে এটিই বিএনপির পরিকল্পনা।
সমকাল : বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী বলে আপনি মনে করেন?
ফখরুল : নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটা অর্থবহ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চলমান আন্দোলনকে সফল করাই বিএনপির সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
সমকাল : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফখরুল :সমকালকেও ধন্যবাদ।
 

No comments

Powered by Blogger.