উম্মাহর প্রতি রমজানের আহ্বান by জহির উদ্দিন বাবর

চন্দ্রবর্ষের নবম মাস রমজান। এ মাসে পশ্চিম দিগন্তে উদিত এক ফালি চাঁদ মুসলিম উম্মাহর জন্য নিয়ে আসে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের অমিয় বার্তা। বছরে পশ্চিশ আকাশে এ ধরনের বারোটি উদয় ঘটে। কিন্তু অন্যান্য উদয়ের মধ্যে উম্মাহর জন্য তেমন কোনো বার্তা বহন করে না। থাকে না মুক্তির কোনো পয়গাম।


এ জন্য রমজানের বাঁকা চাঁদের উদয় অন্য যে কোনো বারের উদয় থেকে একটু আলাদা। শাবানের অমাবস্যার ঘোর কাটতেই পশ্চিম আকাশে রমজানের বাঁকা চাঁদ উঁকি দেয়। মুসলিম উম্মাহর দুয়ারে দুয়ারে পেঁৗছে দেয় তার অঘোষিত আহ্বান।
আল্লাহতায়ালা রমজানের চাঁদ উদয়ের মাধ্যমে মানব জাতির কাছে যে বার্তা পেঁৗছে দেন তা হচ্ছে, 'হে কল্যাণের প্রতীক অগ্রসর হও, আর হে অমঙ্গলের হোতা, তুমি তোমার কুকর্মের রাস টেনে ধর।' যারা কল্যাণ চায়, মুক্তির সন্ধান চায়, তাদের জন্য রমজানে রয়েছে অবারিত সুযোগ। রমজান তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সে সুযোগ গ্রহণ করতে। এ মাসে মুমিনের প্রতিটি আমল তাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে দেয়। সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা ভূষিত হতে পারে মহাপুরস্কারে। সে পুরস্কার হলো অফুরন্ত নেয়ামতের আধার চিরসুখের জান্নাত। যারা পাপাচারের মাধ্যমে জীবনটাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন, তাদের প্রতি রমজানের আহ্বান হচ্ছে_ একটু ক্ষান্ত হওয়ার। নিজের ওপর নিজের জুলুমের মাত্রা না বাড়ানোর। যারা দীর্ঘ এগারো মাস পাপাচারে লিপ্ত থেকে অন্তরটিকে কলুষিত করেছেন তারা এ মাসে স্বচ্ছতার পরশ বুলিয়ে অন্তরাত্মাকে নিষ্কলুষ করতে পারেন। আত্মিক উৎকর্ষ সাধন করে পেঁৗছে যেতে পারেন সফলতার শিখরে।
রমজানের বাঁকা চাঁদ আহ্বান জানায় রমজানের দাবি যথার্থভাবে আদায় করতে। শুধু না খেয়ে থাকাই রোজার চাহিদা নয়। এর প্রকৃত চাহিদা হচ্ছে সংযম। প্রতিটি কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে সংযমী হতে পারলেই কেবল রমজানের হক আদায় করা সম্ভব। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রোজার ছাপ ফুটে উঠতে হবে। কোনো ধরনের অন্যায় তো দূরে থাক, এর কল্পনা করাও পাপ। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা, অগোচরে নিন্দা তথা পাপ কাজ থেকে বিরত রইল না, তার রোজা অর্থহীন উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের উপোস যেন অর্থহীন না হয়, নিছক ফ্যাশন ও লোক দেখানো না হয়_ সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
রমজানের চাঁদ উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিরশত্রু ইবলিশকে শিকলবদ্ধ করে দেওয়া হয়। সে জন্য পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পরিবেশ অনুকূলে থাকে। রমজানে ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ঘটানো যেমন অপরিহার্য, তেমনি মাখলুকের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেওয়াও কর্তব্য। বান্দা না খেয়ে থাকলে আল্লাহর বিন্দুমাত্রও স্বার্থ নেই।
এর দ্বারা তিনি তার নির্দেশ পালনে বান্দা কতটুকু আন্তরিক তা যেমন নিরূপণ করেন তেমনি বনী আদমের পারস্পরিক সুখ-দুঃখের অনুভূতি জাগানোও উদ্দেশ্য। যারা প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করেন তারা এ মাসে দুর্গতদের দুঃখকষ্টের কথা কিছুটা অনুধাবন করতে পারেন। রমজানের আহ্বান হচ্ছে তাদের প্রতি করুণার হাত প্রসারিত করা। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মমতা দেখানো। রমজান মুমিনের আমলের বসন্তকাল। মুমিনের জীবনে গতি আনাই রমজানের অন্যতম লক্ষ্য। দীর্ঘ এগারো মাসে সৃষ্ট মরীচিকা দূর করতেই রমজানের সব প্রয়াস। এ জন্য আমলি পরিবর্তন সাধন না করা গেলে রমজানের দাবি উপেক্ষিত থেকে যায়।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.