অভিনন্দন-জয়তু ফজলে হাসান আবেদ by ফাউজিয়া আলী

জয়তু নববর্ষ। নতুন বছরের প্রথম দিনে এত বড় একটি শুভ খবর। পত্রিকা খুলেই চোখে পড়ল, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করবেন যুক্তরাজ্যের রানি এলিজাবেথ। আবেদ হবেন Most distinguished order of Saint Michel and Saint George.


বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার ও সামাজিক উন্নয়নে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য চার দশক ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ায় জনাব আবেদকে এ সম্মান প্রদান করা হচ্ছে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি, যিনি এ সম্মান পেলেন। ১৯১৩ সালে জাস্টিস নওয়াব স্যার সামসুল হুদা এ সম্মানে ভূষিত হন, যিনি ছিলেন ফজলে হাসান আবেদের বাবা মরহুম সিদ্দিক হাসানের আপন মামা।
ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাক বাংলাদেশে একটি অতি পরিচিত ও প্রিয় নাম। ব্র্যাক (Bangladesh Rural Advancement Committee) সাফল্যগাথার একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের ৬৯ হাজার গ্রামে ব্র্যাকের সেবা প্রসারিত, ১১০ মিলিয়ন জনগণ ব্র্যাকের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মমুখী কাজে সেবাপ্রাপ্ত। প্রাথমিক শিক্ষা, জনস্বাস্থ্যমূলক সেবা, কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদানে ক্ষুদ্রঋণ, আইনি সহায়তা প্রদানে ব্র্যাকের হাত গত চার দশক থেকে প্রসারিত।
ব্র্যাকের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা মডেল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ব্র্যাক সেবা প্রসারিত করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ছাড়াও উগান্ডা, তানজানিয়া, সুদান, পাকিস্তান, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ব্র্যাক বিভিন্নমুখী উন্নয়নে সেবারত ব্র্যাক।
ব্র্যাকের এ রকম নানামুখী সমাজসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে জনাব আবেদ কনরাড এন হিলটন হিউম্যানিটারিয়ান পুরস্কার প্রাপ্ত হন। এ ছাড়া র্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ১৯৮০, ইউনিসেফ পুরস্কার ১৯৯২, ইউএনডিপি মানব-উন্নয়ন পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন। জনাব আবেদের এই সম্মানপ্রাপ্তির জন্য অন্তর থেকে তাঁকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাই। তাঁর এই সম্মান সমগ্র বাংলাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমগ্র জনগণের।
১৯৫০ সালে আমার বাবা সৈয়দ মুস্তাফা আলী পাবনায় সদর মহকুমা প্রশাসক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যে জনাব আবেদের চাচা রাশিদুল হাসান জেলা ও দায়রা জজের পদে বদলি হয়ে এলে আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। জেলা জজের বিরাট ভবনটি ইছামতীর বাঁধের পাশে ৮-১০ বিঘা জায়গাজুড়ে সুন্দর বাগান ও গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত ছিল। রাস্তার অপর পাশেই ছিল সদর মহকুমা প্রশাসকের জন্য নির্দিষ্ট বিরাট এলাকাজুড়ে সুন্দর লাল ইটের বাংলোটি। রাশিদুল হাসান সাহেব তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়ে, এক ভাগ্নি ও ভাইপো আবেদকে নিয়ে পাবনায় আসেন। আবেদ ভাই, পাবনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন এবং আমার অগ্রজ সৈয়দ শওকত আলী ওই স্কুলে পড়তেন। আবেদ ভাই তাঁর সমসাময়িক ছিলেন। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীর ও আমার অনুজ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ও প্রচুর যাতায়াত ছিল।
আড়ং, ব্র্যাক প্রতিষ্ঠিত হলো। ব্র্যাক আজ একটি ঘরে ঘরে পরিচিত নাম। আড়ংয়ের মাখন, দই, দুধ প্রতিটি ঘরে। হস্তশিল্প সমারোহ দেখতে হলে আড়ং, ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা পেতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ব্যাংকিং করছি ব্র্যাক ব্যাংকে। এমনকি আমার গৃহপরিচারিকাও ‘বেরাকের’ সঙ্গে পরিচিত। তাঁর ছেলেমেয়ে ব্র্যাকের স্কুলে যায়, ব্র্যাকের আর্থিক সহায়তায় তার বাড়িঘর হয়েছে। ব্র্যাকের সহায়তায় বাংলাদেশের কত নিম্নবিত্ত পরিবার দাঁড়িয়ে গেছে।
আজ আমরা ফজলে হাসান আবেদের জন্য গর্বিত। আমরা তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
ফাউজিয়া আলী: সাবেক অধ্যক্ষ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.