উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল-কৃতকার্যদের প্রতি অভিনন্দন

বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশের কলেজগুলোতে আনন্দ-উৎসব শুরু হয়েছে। শুধু যে ভালো ফল হয়েছে তা নয়, এবার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছেন। পাসের এ হার নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।


এ ফল দেখে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিদ্যায়তনগুলোর অভিনিবেশ, অভিভাবকদের তদারকি ও শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায় থাকলে পাসের হার শতভাগে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। সত্যিকার অর্থে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি সত্ত্বেও একজন শিক্ষার্থী কেন ফেল করবেন, তা বোধগম্য নয়। সবার চেষ্টা থাকলে নিশ্চয়ই একদিন পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে শতভাগ পাসের রেকর্ডও স্থাপিত হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে একজন শিক্ষার্থীর সামনে বিস্তৃত দিক খুলে যায়। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অধিকতর স্বাধীন ও নিশ্চিত জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এ প্রবেশপথ তাই গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা সত্য, যারা পাস করেছেন, তাদের সবার জন্য সমান সুযোগ বাস্তব কারণেই থাকে না। এমনকি যারা ভালো ফল করেছেন, তারাও চাহিদা অনুসারে প্রার্থিত শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি হতে পারবেন কি-না সে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। দেশে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সব মিলিয়ে আসনসংখ্যা হয়তো পাসের সংখ্যার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দের তালিকায় সেরা শিক্ষায়তনগুলোর আসনসংখ্যা সত্যিই অপ্রতুল। ফলে প্রতিবছরের বাস্তবতা এই যে, বহু মেধাবী শিক্ষার্থী প্রত্যাশিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাইরে কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় আছে। কিন্তু সেগুলোতে ভর্তি হতে গিয়ে অভিভাবকদের সাধ ও সাধ্যের হিসাব অনেক সময়ই মেলে না। এর বাইরে বহু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্টিফিকেট বিতরণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমালোচনা করা হয়। অথচ সঠিক নিয়ম-কানুন তৈরি ও অনুসরণ করতে পারলে এ প্রতিষ্ঠানগুলোও শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে পারত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধাররা বিষয়টি আমলে নিলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উদ্যোগী হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত স্থানও তারা জোগাতে পারে। তার পরও দেশে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে। বিশেষত তথ্য-প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের মতো আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রয়োজন সম্প্রতি অনেক বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাই উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পাবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এবারের ফল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের দিকে আলোকপাত করেছেন। দেখা যাচ্ছে, সারাদেশেই ভালো ফলের দিক থেকে ক্যাডেট কলেজগুলো এগিয়ে আছে। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, শ্রেণীকক্ষে পড়াশোনা, বিশ্রামের সময় বিশ্রাম, পড়ার সময় পড়া নীতি অনুসরণ করে ক্যাডেট কলেজগুলো দারুণ ফল করায় অনেকেই মনে করছেন, বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি পড়াশোনা, হোমওয়ার্ক, কোচিং ইত্যাদি যেসব চাপ সৃষ্টি করা হয়, তার যৌক্তিকতা কী? ক্যাডেট কলেজ মডেল অনুসরণ করলেই ভালো ফল মিলতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। হয়তো রাতারাতি কোচিং বন্ধ করে শ্রেণীকক্ষনির্ভর পাঠদান সম্ভব নয়। কিন্তু ক্রমেই শ্রেণীকক্ষনির্ভর পাঠদানের দিকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা, নীতিবোধ ও দায়িত্বশীলতার অনুশীলনও নিশ্চিত করতে হবে। এবার যারা কৃতকার্য হলেন, তাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। কৃতকার্যদের প্রতি আমাদের অভিনন্দন। উচ্চতর প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য নতুন অধ্যবসায়ে তাদের মনোনিবেশ করতে হবে। যারা অকৃতকার্য হলেন, তাদের হতাশ হলে চলবে না। নতুন আশা ও মনোবাসনা নিয়ে নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতের বাংলাদেশের সফলতার ভার এ নতুন প্রজন্মের ওপরই ন্যস্ত।
 

No comments

Powered by Blogger.