নগর ব্যবস্থাপনা-ঢাকা শহরের পরিকল্পিত সম্প্রসারণ by মোঃ রাশেদুল হাসান

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে যথাযথ পুনর্বাসন করতে হবে জনসংখ্যা বাংলাদেশের একটি প্রধান সমস্য। সরকার ঢাকা শহরের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।


প্রথমে আসি ঢাকা শহরের সম্প্রসারণ বিষয়ে। এ জন্য সরকার ঢাকা শহরের চারদিকে অনেক স্যাটেলাইট টাউন গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ শহরেগুলোকে মূল ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সংযোগ সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। এ স্যাটেলাইট টাউনগুলোকে অবশ্যই ঢাকার সঙ্গে সংযোগ করতে হবে বিভিন্ন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে। পাতাল সড়ক, পাতাল ট্রেন, উড়াল সড়ক, উড়াল ট্রেন, ইলেকট্রিক ট্রেন, চার লেনবিশিষ্ট সড়ক, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ওভারপাস ইত্যাদি সুবিধা সংযোজন করতে হবেওই স্যাটেলাইট টাউনগুলোতে। মূল ঢাকা শহরকে চলাচলের উপযোগী করার জন্য সরকার ওই কর্মসূচি ঢাকার ভেতরে বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ঢাকার সঙ্গের জেলাগুলোকে ওই যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। ঢাকা শহরে উড়াল সড়ক ও উড়াল ট্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ পরিকল্পনা আরও ১০ বছর আগে গ্রহণ করার দরকার ছিল। তাহলে ঢাকা শহরের একপ্রান্ত হতে অন্যপ্রান্তে যেতে এক ঘণ্টার মধ্যে সম্ভব ছিল। তাই স্যাটেলাইট টাউনেও ওই প্রকল্পগুলো ঢাকা শহরের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রহণ করা উচিত, তা না হলে ওই স্যাটেলাইট টাউনগুলো ঢাকা শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে পারবে না। এ ছাড়া সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ওই স্যাটেলাইট টাউনে স্থানান্তর করতে হবে, তা না হলে ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমানো যাবে না। সরকার সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে সচিবালয় স্যাটেলাইট টাউনগুলোর একটিতে করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ওই স্যাটেলাইট টাউনে আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কি-না তা সরকারকে মনিটরিং করতে হবে। প্রাকৃতিক জলাশয় অবশ্যই ভরাট করা যাবে না। তা না হলে প্রকৃতি প্রাকৃতিক নিয়মে ওই শহরগুলোকে আঘাত করবে। ঢাকা শহর ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। তাই ঢাকা শহরে ছয়তলার বেশি ভবন তৈরির অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজউক কর্তৃপক্ষের নিতে হবে। যদি উঁচু ভবনের অনুমতি দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই ভূমিকম্প প্রতিরোধী প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে ঢাকার শহরের ওলিগলিতে অ্যাপার্টমেন্ট হচ্ছে। ভূমিকম্প হলে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হবে। ঢাকা শহরের মানুষ পরিবর্তন চায়। যদি এ পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে মানুষ তাকে স্বাগত জানাবে। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ঢাকা শহর তথা সারাদেশ থেকে ট্যাক্স নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানুষ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ট্যাক্স দেবে, যদি তা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানকল্পে গৃহীত হয়।
সরকার গৃহীত স্যাটেলাইট টাউন বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। এ টাউনগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। ওই জমি যাতে সাধারণ মানুষ থেকে জোর করে না নেওয়া হয়, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষ উন্নয়ন চায়, তবে তা সাধারণ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা যাবে না। উন্নয়ন চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। ওই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে যথাযথ পুনর্বাসন করতে হবে। যদি সরকারের এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাপক সাধারণ জনগণের মতের বিপক্ষ হয়, তাহলে ব্যাপক সরকারবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু টাউনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। তা না হলে ওই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে, যা সরকারের জন্য সুখকর হবে না।

মোঃ রাশেদুল হাসান : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
 

No comments

Powered by Blogger.