জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সহায়ক ভূমিকা কাম্য-প্রধান বিচারপতির পদক্ষেপ

দীর্ঘদিন পর সুপ্রিম কোর্টে পরিবর্তনের মৃদুমন্দ বাতাস বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম অনিয়ম দূর করতে ক্রমিক অনুসারে ফৌজদারি মামলার শুনানির যে প্রতিকারমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই।


আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি নিরীহ উদ্যোগ মনে হলেও এর গুরুত্ব অসাধারণ এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ। এই একটি সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তাহলে সেটা মামলা ব্যবস্থাপনায় একটা বিরাট পরিবর্তন নিশ্চিত করবে। এ জন্য বিচারপ্রার্থী, আদালতের কর্মকর্তা বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের বড় ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই।
প্রধান বিচারপতি তাঁর শপথ-পরবর্তী ভাষণে হাইকোর্টের কোনো কোনো একটি বেঞ্চে এক দিনে শুনানিযোগ্য মামলার দীর্ঘ তালিকার অসংগতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এটা একটা সত্যিই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। খালি চোখে জনগণ ইদানীং উচ্চ আদালতের মামলা ব্যবস্থাপনায় অনেক অস্বাভাবিক বিষয় অস্বস্তির সঙ্গে লক্ষ করছে। জামিন প্রদানের সম-এখতিয়ারসম্পন্ন একাধিক বেঞ্চ বহাল থাকতে কেন একটিমাত্র বিশেষ বেঞ্চে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন, তার কোনো সদুত্তর তাঁরা পান না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা পরে দায়ের করা নতুন মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করে মক্কেলদের প্রতিকার দিতে পারছেন। এ জন্য অপেক্ষাকৃত তরুণ আইনজীবীরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিকার লাভের প্রবণতা দেখাচ্ছেন। এর ফলে পেশাদারি ও নৈতিকতা সমুন্নত বা উজ্জ্বল না হয়ে বরং নিষ্প্রভ হচ্ছে। আইনের চোখে সবাই সমান—সে নীতির ব্যত্যয় ঘটছে।
এ রকম একটা প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির প্রতিকারমূলক উদ্যোগের সাফল্য বিশেষভাবে কাম্য। এ জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে সুপ্রিম কোর্ট বারের দায়িত্বশীল সদস্যদের কাছ থেকে আমরা সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা আশা করছি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, ‘নতুন মামলা দাখিল করার সময় সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ-কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকে।’ মোশন অর্থাত্ নতুন মামলাগুলোর দ্রুত শুনানি অনুষ্ঠানে অনেক বেঞ্চ-কর্মকর্তাই বাস্তবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম থাকেন। এখন যে প্রজ্ঞাপন জারি হলো, তা কার্যকর হলে সে ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আর বেঞ্চ-কর্মকর্তাদের থাকবে না। বিশেষ কারণে ক্রমিক সংখ্যার হেরফের ঘটা ন্যায়বিচারের স্বার্থে কখনো নিশ্চয় হতে পারবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আদালত প্রকাশ্যে ঘোষণা করবেন। আমাদের দেশে অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় তা বাস্তবায়ন করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আমরা আশা করব, প্রধান বিচারপতির এ সিদ্ধান্ত যেন কিছুতেই অপাঙেক্তয় না হয়ে পড়ে।
প্রধান বিচারপতি সর্বোচ্চ আদালতের প্রশাসনে গতিসঞ্চারের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে, তা বহুদিনের প্রতীক্ষিত। তিনি ইতিমধ্যেই দুজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটিকে অস্বাভাবিক গতিতে মামলা নিষ্পত্তির বিষয় খতিয়ে দেখতে আদেশ দিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই কমিটি যথাসময়ে যথা প্রতিকারের সুপারিশ পেশ করবে এবং তা সমান গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

No comments

Powered by Blogger.