আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন-প্রতিটি শিশুই সম্ভাবনাময়

একটি গবেষণার তথ্য অনুসারে, আমাদের দেশে প্রতি হাজারে ৮টি শিশু অটিস্টিক। অর্থাৎ একটি সুস্থ শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি যেভাবে ঘটে হাজারে ৮ বা তারও বেশি শিশুর ক্ষেত্রে তা ঘটে না। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে সংখ্যাটি অনেক বড়।


পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের জন্য শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা যেমন আছে তেমনি সমাজে এমন শিশুদের নিয়ে সচেতনতাও আছে। ফলে সেখানে একটি শিশু ভিন্নভাবে বেড়ে উঠতে থাকলে সমাজ তাকে সর্বতো প্রকারে সহযোগিতা করে। কিন্তু আমাদের দেশে চিত্রটা ভিন্ন। অটিস্টিক শিশুরা সমাজ তো বটেই, অনেক সময় পরিবার কর্তৃকও অবহেলার শিকার হয়। অটিস্টিক শিশুরা অনেক ক্ষেত্রেই সৃষ্টিশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পায় না। ফলে শেষ পর্যন্ত অনেকেই পরিবার ও সমাজের কাছে বোঝা হিসেবেই পরিগণিত হয়। এর পেছনে একটি কারণ উপযুক্ত চিকিৎসা অবকাঠামোর অনুপস্থিতি। বাংলাদেশের স্কুলগুলো এখনও অটিস্টিক শিশুদের সাদরে বরণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। অনেক সময়ই দেখা যায়, অটিস্টিক শিশুরা স্কুলে ভর্তি হলেও প্রত্যাশিত যত্ন পায় না। সহপাঠীরাও তাদের সঙ্গে বল্পুব্দত্বপূর্ণ আচরণ করতে পারে না। এমনকি অনেক পরিবার অটিস্টিক শিশুকে স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহীও হয় না। তবে আশার কথা, পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতনতা আগের থেকে বেশি। আর এ সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন একটি মাইলফলক উদ্যোগ বলেই বিবেচিত হচ্ছে। ঢাকায় আয়োজিত উদ্যোগটিতে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি, শ্রীলংকার ফার্স্ট লেডি, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা। এ সম্মেলনে অটিস্টিক শিশুদের জন্য করণীয় নির্ধারণে ঢাকা ঘোষণা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সার্ক দেশসহ আন্তর্জাতিক অটিজম উদ্যোগগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরও স্পষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চয়ই এ ক্ষেত্রে সক্রিয়তা বাড়াবে। একই সঙ্গে দেশে যে আমাদের অনেক করণীয় আছে সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করল সম্মেলনটি। বিশেষত অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দরকার। এখন বঙ্গবল্পুব্দ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অটিজম সেবার একটি সেন্টার স্থাপিত আছে। মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও সেবার ব্যবস্থা আছে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও সীমিত চিকিৎসা সুযোগ আছে। এ সেবার পরিধি ও মান বাড়ানো দরকার। বিশেষত ঢাকার বাইরে সেবা পেঁৗছানোর ব্যবস্থা দরকার। অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ স্কুল যেমন দরকার তেমনি সাধারণ স্কুলগুলোতে তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভর্তি করানো ও পাঠদানের ব্যবস্থা থাকা উচিত। দেখা গেছে, অটিস্টিক শিশুরা বিশ্বজুড়ে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় বড় অবদান রেখেছে। ফলে তাদের অবহেলা করার সুযোগ নেই। বরং বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মনে করি, অটিজম সম্মেলন একটি চমৎকার সুযোগের দ্বার খুলে দিল। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ছড়িয়ে গেলে আমাদের অটিস্টিক শিশুরাও সুন্দর পরিবেশে বিকশিত হতে পারবে। ভবিষ্যৎ শিশুদের জন্য সে পরিবেশ নিশ্চিত হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।
 

No comments

Powered by Blogger.