তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক-অসন্তোষ কাম্য নয়-ওয়াদা রক্ষা করুন

দুজন সহকর্মীকে হারিয়েছেন গাজীপুরের টঙ্গীর নিপ্পন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা। বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নিলে প্রাণ হারান প্রতিষ্ঠানটির দুই শ্রমিক। এর পরও বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়ার যে ওয়াদা করেছিল মালিকপক্ষ, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন শ্রমিকেরা।


কিন্তু গত মঙ্গলবার পাওনা চাইতে এসে বিজিএমইএ ভবনের সামনে আবার পুলিশের হাতে লাঠিপেটার শিকার হতে হলো শ্রমিকদের। কিছুসংখ্যক মালিকের এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের দায়ভার পোশাকশিল্প খাত আর কত দিন বহন করে চলবে?
তৈরি পোশাকশিল্পে বিশৃঙ্খলার জন্য প্রায়ই শ্রমিকদের অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। নিপ্পনের ঘটনায় শ্রমিকদের কোনোভাবে দায়ী করা যাবে না। তাঁরা মালিকপক্ষের কাছে নতুন কোনো আবদারও করেননি। ওয়াদা অনুযায়ী, শ্রমিকেরা বিজিএমইএ ভবনে গেলেও সেখানে মালিকপক্ষের কেউ যায়নি। স্বাভাবিকভাবে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। সে সময় মালিকপক্ষের কেউ থাকলে কিংবা বকেয়া দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলে অনায়াসে উত্তেজনা কমানো যেত। রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক বন্ধ করে শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি পালনেরও প্রয়োজন হতো না। পরে অবশ্য বিজিএমইএর সভাপতির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, এখন আর সমস্যা হবে না। তাঁর এ অভয়বাণী কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করছে মালিকপক্ষের সদিচ্ছার ওপর। লোকসান বা অন্য কারণে কোনো শিল্প-কারখানা মালিকপক্ষ বন্ধ করতে পারে। কিন্তু শ্রমিকদের পাওনা পুরোপুুরি পরিশোধ করতে হবে। সেটি না করলেই বিপত্তি বাধে। কেবল টঙ্গীর নিপ্পন গার্মেন্টস নয়, আরও বহু গার্মেন্টসের মালিক শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দেন। এটি বেআইনি ও অমানবিক।
তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশের স্বার্থেই মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে সদ্ভাব থাকা জরুরি। মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়নে মালিকের বিনিয়োগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি শ্রমঘন এ শিল্প খাতটির বিকাশে শ্রমিকদের অবদানও কম নয়। অতএব পরস্পরের স্বার্থ রক্ষায় সচেতন থাকা প্রয়োজন। আশা করি, নির্ধারিত সময়ে নিপ্পন কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ করবে। তাতে বেকার হয়ে যাওয়া শ্রমিকেরা অন্তত তাঁদের ইতিমধ্যেই বিক্রি করে দেওয়া শ্রমের মজুরিটা পাবেন।

No comments

Powered by Blogger.