খরমা খালের বাঁধ-অন্যায়ে উদাসীন প্রশাসন

সুন্দরবন ইউনিয়নের প্রভাবশালী কয়েকজন ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে মংলার খরমা খালে বাঁধ দিয়েছে। উদ্দেশ্য, মাছের চাষ। 'মাছে-ভাতে বাঙালি'_ এমন প্রবাদ রয়েছে। কিন্তু মাছের জোগান চাহিদার তুলনায় ঢের কম। বাজারে গেলে মাছের দাম শুনে এমনকি মধ্যবিত্তরাও হতাশ হয়ে পড়েন।


তাই মাছের চাষে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাকে স্বাগত জানানোই স্বাভাবিক। এ জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে, এটাও প্রত্যাশিত। কিন্তু মংলা এলাকার ঘটনাটি ভিন্ন। নিছকই ব্যক্তিগত লাভের আশায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এতে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি অবর্ণনীয় দুর্দশায় পতিত হয়েছে শত শত মানুষ। স্বাভাবিক মাছ চাষও বিঘি্নত হচ্ছে। বিস্ময়কর যে, দেড় বছরের বেশি আগে বেআইনিভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করা হলেও প্রশাসন রয়েছে সম্পূর্ণ উদাসীন। অভিযোগের সত্যতা তারা স্বীকার করছেন এবং মেনে নিচ্ছেন যে কাজটি খুব অন্যায়। কিন্তু প্রতিকারের পথ যেন জানা নেই তাদের। দেখছি-করছি, হবে-হচ্ছে বলেই কেটে যাচ্ছে তাদের সময়। বুধবার সমকালে 'খরমা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'খরস্রোতা খালে বাঁধ দেওয়ার ফলে বৌদ্ধমারী ও আগলাদিয়া গ্রামের শত শত পরিবার স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রতিকারের জন্য এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিলেও কোনো সুফল পাচ্ছে না।' এভাবেই কি তাহলে অন্যায় স্থায়ী হয়ে থাকবে? যখন অন্যায়কারীদের সঙ্গে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমঝোতা হয়, তাহলেই এমনটি হতে পারে। রাজনৈতিক প্রভাবও কাজ করে থাকতে পারে। এ ধারণা সত্য হোক, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেছেন, 'আমি খাল কাটার পক্ষে। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমানও বলেছেন, 'খাল বেঁধে দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন জলাবদ্ধতার শিকার।' এ অবস্থায় জনদুর্ভোগের অবসান ঘটতে কোনো বাধাই থাকা উচিত নয়। আর যদি খরস্রোতা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষকারী মহলের দাপটের কাছে প্রশাসন নতিস্বীকার করে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না।
 

No comments

Powered by Blogger.