বাজেট ও রমজান-অস্থির বাজার সামলাতে হলে

ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়_ বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমানের এই অভিমতের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আমরা আরও বলতে পারি যে, এই কাজে যখন যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেকে যুক্ত করেছে, পরিণতি ঘটেছে ব্যর্থতায়।


তবে ব্যবসা না করেও সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারে। জনদুর্ভোগ কমাতেও সবাই পাশে পেতে চায় সরকারকেই। স্বাধীনতার পরপর সরকারিভাবে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও পণ্য বিক্রয়ের জন্য গঠন করা হয়েছিল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। ন্যায্যমূল্যে দেশজুড়ে পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে মহৎ। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। এখন টিসিবি নামের প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই ক্ষীণকায়। বাণিজ্য সচিবের হিসাবে সংস্থাটির কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের জন্য প্রায় দেড় হাজার লোকবল দরকার, কিন্তু রয়েছে ১২৫ জন। তবে দেড় হাজার কেন, তার কয়েক গুণ লোকবল জোগান দেওয়া হলেও তাদের পক্ষে ১৬ কোটি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজারে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গেও তারা তাল মেলাতে অক্ষম। এর কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের নমনীয়তার অভাব। অনেক ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য অশেষ দুর্ভোগ ডেকে আনে। মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার জন্য তারা আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করে না। সরকারি কিছু লোককে পণ্য আমদানি এবং বাজারে তা সরবরাহ করার সুযোগ প্রদানের মধ্যে এর সমাধান নিহিত নেই। সরকারের কাজের ধরনই এ ক্ষেত্রে বাধা। অতি জরুরি চাহিদা মেটানোর মতো পরিস্থিতিতেও তারা এ কারণেই বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তারপরও দেশবাসীকে শুনতে হয় 'টিসিবিকে সক্রিয় করার' আশ্বাসবাণী। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখেও তা ঘটল। রমজানে কয়েক ধরনের পণ্যের চাহিদা যথেষ্ট বাড়ে। সরবরাহ সঠিক মাত্রায় না রাখা গেলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ গ্রহণ করে। তদুপরি হাল আমলে বিশ্ববাজার যথেষ্ট অস্থির। গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল থেকে শুরু করে বহু ধরনের নিত্যপণ্যের জন্য আমাদের ব্যাপক নির্ভরতা বিশ্ববাজারে। এসব পণ্যের বাজারদর বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। টিসিবির মাধ্যমে কিছু পণ্য সরকারিভাবে আমদানি করে নয়, বরং যথাযথ শুল্ক-কর নীতি প্রণয়ন এবং বাজারে পণ্যের সরবরাহপ্রবাহ সুনিশ্চিত করায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যেই এর সমাধান খুঁজতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বিঘি্নত করে এবং দ্রব্যমূল্য বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকাও বাজার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। বরাবরই একশ্রেণীর লোক বাজার অস্থির করায় সক্রিয়। তাদের কলাকৌশল এমনকি সরকারের চেয়েও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষে ধরে ওঠা সহজ বলে দেশবাসীর ধারণা। বুধবার এফবিসিসিআই সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে রমজান মাসে অতি মুনাফা থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সভা থেকে আনুষ্ঠানিক আহ্বানেই বাজার স্বাভাবিক থাকবে না, সেটা জানা কথা। বাজারে ব্যাপক মনিটরিং এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তার করণীয় ঠিকভাবে করছে কি-না তার প্রতি নজরদারিও অপরিহার্য। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর এটাও মনে রাখতে হবে যে, এবার রমজান মাস পড়েছে জাতীয় বাজেট ঘোষণার পরপরই। বাজেটকেও কিন্তু জনদুর্ভোগের নামান্তর হিসেবে ধরা হয়।
 

No comments

Powered by Blogger.