পুলিশের লাঠিপেটা-শিক্ষকদের মর্যাদা দেওয়ার এই নমুনা?

একদিকে প্রধানমন্ত্রী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়ে তাঁদের মর্যাদা বাড়ালেন, আর একই দিনে তাঁর সরকারের পুলিশ শাহবাগের মোড়ে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের লাঠিপেটা করল।


প্রধানমন্ত্রী মর্যাদা দিতে চাইলে পুলিশ কেন শিক্ষকদের পেটায়? এই কি মর্যাদার নমুনা? সমাবেশে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষক জামালপুর মাদারগঞ্জে নিজ বাসায় ফিরে গতকাল মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন।
সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা সরকারেরই নীতি। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকেরা তাঁদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবি পূরণ যদি সরকারের অসাধ্যও হয়, কিছু একটা সমাধান তো বের করা সম্ভব। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান, স্মারকলিপি দিতে চান—এটা তো গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেই পড়ে। পুরো মিছিল নিয়ে না হোক, একটি প্রতিনিধিদল তো যেতে পারত প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কোনো সুযোগই তাঁদের দেওয়া হলো না। তাঁরা তো কোনো ভাঙচুর করেননি। কারও সঙ্গে সহিংস আচরণ করেননি।
তাহলে কেন জলকামানের গরম পানি ছিটিয়ে আর লাঠিপেটা করে নিরীহ শিক্ষকদের আহত করা হলো। গ্রেপ্তার করা হলো কয়েকজনকে। এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। শিক্ষকেরা খেয়েপরে চলার মতো বেতন নিশ্চিত করতে চান। শিক্ষায় বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এর পেছনে সব শিক্ষকেরই কম-বেশি অবদান আছে। এ অবস্থায় আর কিছু না হোক, অন্তত কিছু নগদ সুবিধা, কিছু আশ্বাস তো দেওয়া যেত। শিক্ষকদের পিটিয়ে আধমরা করা কোন গণতন্ত্র?
পুলিশের প্রধান কাজ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা, খুনখারাবি বন্ধ করা, শিক্ষক পেটানো তাদের দায়িত্ব নয়। শিক্ষকেরা শাহবাগের মোড়ে বসে রাস্তা অবরোধ করেছেন বলে রাজপথে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য শিক্ষকদের পেটানোর যে দাবি পুলিশ করেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত হওয়া উচিত। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.