বদলে যাও বদলে দাও মিছিল- দুর্ঘটনা ঠেকাতে কয়েকটি কাজ by জুবায়ের মোর্শেদ

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’—এ দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও নির্বাচিত চারটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক জুবায়ের মোর্শেদ-এর বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ আরও তিনজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো। এটি আমার কানাডার সড়কপথের একটি পর্যবেক্ষণ অভিজ্ঞতা। আমার সামনে যে রাস্তাটি তার নির্দেশনায় আছে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু একটি গাড়ি চলছে ৭৫ কিলোমিটারে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হলো। আড়ালে লুকিয়ে থাকা পুলিশ দ্রুত বেরিয়ে এসে গাড়িটি থামাল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে গাড়িচালকের হাতে ৩০০ কানাডিয়ান ডলারের একটি জরিমানা টিকিট ধরিয়ে দিয়ে পুলিশ চলে গেল। তৃতীয় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কানাডা অন্যতম। প্রশাসনিক অবকাঠামো, আইনশৃঙ্খলা ইত্যাদি ব্যাপারে তারা বেশ আধুনিক। প্রযুক্তির নিত্যনতুন ব্যবহার তাদের সর্বত্র। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও এসব আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। তাদের হাতে রয়েছে স্পিড গান, স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা, রাডারসহ আরও অনেক কিছু। ওই গাড়িটি পুলিশের স্পিড গানের শিকার। গাড়ির চালক জরিমানা এড়াতে পুলিশ সার্জেন্টকে কোনো কিছুর বিনিময়ে মোহান্বিত করা এখানে অসম্ভব একটি ব্যাপার। আর কেনই বা তিনি মোহে পড়বেন! আদায়কৃত জরিমানা ৩০০ ডলারের ভেতর তাঁর কমিশন তো আছেই, যা সরকারের তরফ থেকেই দেওয়া হয়। হাতে নগদ অর্থ নেওয়ার কোনো সিস্টেম নেই এখানে।
প্রবাসে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে কদিন আগে দেশে ফিরলাম। দেশটা ঘুরে দেখার তীব্র বাসনায় বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে। গন্তব্য ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। আসাদ গেট সিগনালে রাস্তার মাঝের লেনে দাঁড়ালাম লালবাতির জন্য। আমার ডান পাশে বড় একটি বাস দাঁড়াল। সবুজ লাইট জ্বলার পর বাসটি একরকম জোর করেই বাঁয়ে চাপিয়ে সামনে এগোতে লাগল। দেখলাম যাত্রীর জন্য বাসটি বাঁয়ে গিয়ে থামল। স্থানটি বাস স্টপেজের জন্য বরাদ্দ কি না তার কোনো প্রমাণ নেই। পাশেই ট্রফিক পুলিশ দণ্ডায়মান, এরই মধ্যে বেঁধে গেল যানজট। আর বাসটি ডান পাশ থেকে বাঁয়ে যাওয়ার জন্য চালককে অত্যন্ত ঝুঁকি নিতে হয়েছিল, যা তাঁর সদিচ্ছা ও সচেতনতার অভাবের প্রকাশ মাত্র। সে চাইলেই বাঁ পাশের লেনের পাশের লেনে থাকতে পারত, কারণ সে তো জানত যে সে বাঁয়ে দাঁড়াবে।
মহাসড়কে এসে আমার গাড়িটি বেশ দ্রুতই চালাচ্ছিলাম, ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার। ছোট-বড় গাড়ি, বাস আমাকে ওভারটেক করছিল। আমি যতটা সম্ভব গাড়িটি বাঁয়ে নিয়ে ওভারটেক করা গাড়িগুলোকে জায়গা করে দিচ্ছিলাম। টাঙ্গাইল বাইপাস দিয়ে যখন চালাচ্ছিলাম আমার সামনে বেশ কিছু ট্রাক ও বাসের সারি, পেছনেও তাই। বিপরীত দিক থেকেও বেশ কিছু গাড়ি আসছিল। আমার সামনের গাড়িগুলো প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলছিল, আমিও ট্রাফিকের সঙ্গে চলছিলাম। হঠাৎ পেছনের বাসটি গতি বাড়িয়ে আমাকে ওভারটেক করতে যায়। বিপরীত থেকে আসছিল একটি ট্রাক, যা বাসটি থেকে বেশি দূরে ছিল না। বাসটির পেছানোর কোনো পথ ছিল না। বাসটি তখন বাঁয়ে এসে আমার গাড়িটি চাপ দেয়। আমার গাড়িটিকে একরকম বাধ্য হয়েই তখন রাস্তা থেকে অর্ধেকটা নামিয়ে দিই মাটিতে এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। বড়ই উচ্ছৃঙ্খল, চঞ্চল পরিস্থিতি, আতঙ্কে ভেতর থেকে ঘেমে উঠছি। সে মুহূর্তে আমার গাড়িটি রাস্তার পাশে থাকা খাদে পড়ে যেতে পারত এবং বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারত। অথবা চালক একটু মানসিক দুর্বল হলে অনিবার্য কিছু ঘটে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। ওই বাসচালকটি একটু সচেতন হলে, সড়কপথের প্রাথমিক আইনগুলো জানলে তাঁর এমন কাজ করার ইচ্ছা জাগত না। আমার আরও কিছু সমস্যা চোখে পড়েছে, অতি অল্প কথায় লিখছি।
গাড়ির গতিসীমা, আমার পর্যবেক্ষণ অভিজ্ঞতায় এখন এটি মারাত্মক সমস্যা। এ সমস্যা তদারকির জন্য রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তাঁরাও হয়তো নেহাত অসহায় অপর্যাপ্ত প্রযুক্তির কাছে। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ যাত্রী, বাস অথবা অন্য পরিবহনে যাতায়াত করি তাদের প্রত্যেকের এক জোড়া নয়নই কিন্তু হয়ে উঠতে পারে এক একটি আধুনিক স্পিড গান। এই সামান্য সচেতনতা কিন্তু রোধ করে দিতে পারে অসংখ্য দুর্ঘটনা।
অবকাঠামোগত সমস্যা, মহাসড়কগুলোয় মারাত্মক সব বাঁক রয়েছে, যা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। মুখোমুখি যতগুলো সংঘর্ষ ঘটে তার নব্বই ভাগই ঘটছে বাঁকগুলোতে। এসব বাঁকের শুরুতে নির্দিষ্ট চিহ্ন রয়েছে, যা শুধু দিনের আলোতে বোঝা সম্ভব, রাতে নয়। স্পিড ব্রেকারগুলোও তৈরি করেছে একেবারে দায়শূন্যভাবে। কর্তৃপক্ষ এমন অবৈজ্ঞানিক কাজ কী করে করেন? বেশির ভাগই রোড থেকে কেবল তিন-পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতাবিশিষ্ট, কোনো মার্কিং নেই। বাস কিংবা ট্রাকচালকেরা এসব স্পিড ব্রেকারের ওপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এতে জানমালের বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার কোনোটি ৬-১০ ইঞ্চি। যারা নিয়মিত একই রুটের চালক তাদের হয়তো চালাতে কখনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যেসব চালক ওই পথে নতুন তাদের দিনে না হলেও রাতে গাড়ি চালানোটা বিপজ্জনক। মহাসড়কের সার্বিক বেহাল অবস্থার কথা আর না-ই বললাম।
গাড়ির হাই বিম, রাতে অবশ্যই দ্রুতগতির গাড়ির চালক দূরে দেখার জন্য হাই বিম ব্যবহার করবেন। কিন্তু ওই গাড়ির বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালকের দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হবে ওই হাই বিমে। আর যদি এই গাড়ির চালকও হাই বিম দিয়ে তখন গাড়ি চালায় তবে দুই চালকেরই দৃষ্টিবিভ্রম হবে। এতে ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত। তাই উচিত সব সময় বিপরীত দিকের কোনো গাড়ি অতিক্রমের সময় লো বিম দিয়ে গাড়ি চালানো। এগুলো কে শেখাবে এসব চালককে?
বাংলাদেশের মহাসড়কের সমস্যা ক্যানসার রোগীর মতোই, হঠাৎ করে সমাধানের বিষয় নয়। দিনের পর দিন আমাদের চেষ্টা, সাধনা, প্রচারণা করতে হবে। আমাদের যেতে হবে সাধারণ যাত্রীদের কাছে তাদের অধিকার জানাতে। যেতে হবে প্রতিটি চালকের কাছে তাদের কর্তব্য বোঝাতে। পৌঁছে দিতে হবে যাত্রী এবং চালকদের সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। আলোর মিছিল নিয়ে আমরা কি পারি না সময়ের এই প্রয়োজনটুকু মেটাতে? প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু আর কত দিন মেনে নেব?
জুবায়ের মোর্শেদ: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
r_eehan@ yahoo.com

যোগ দিন ফেসবুক পেজে : www.facebook.com/bjbdmichil
জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।

সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ নিহত ও আহত হলে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য দেওয়া উচিত বলেমনে করেন কি?

 হ্যাঁ ৮৭%  না ৫%
 মন্তব্য নেই ৮%
১৬ মে, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিক শিক্ষা ইভ টিজিং কমিয়েআনতে পারে?
 হ্যাঁ ৮৫%  না ৯%
 মন্তব্য নেই ৬%
১৬ মে, ২০১২ পর্যন্ত
বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল ভারতে দেখাচ্ছে না। এটা কি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন?
 হ্যাঁ ৮৫%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৭%
১৬ মে, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com

No comments

Powered by Blogger.