সোনারগাঁয়ের জেলে-জাল যার জলা তারই থাকতে হবে

আবহমানকাল থেকে মাছ ধরে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে এলেও বাংলাদেশের মৎস্যজীবী সম্প্রদায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সংকটে পড়ছে, সোনারগাঁয়ের অঘটন তার নতুন মাত্রা। অস্বীকার করা যাবে না, সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিল, বাঁওড়, খালসহ ২০ একরের বেশি আয়তনের বদ্ধ জলাশয় ইজারা দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছিল সদুদ্দেশ্য থেকেই।
আশা করা হয়েছিল, মৎস্য আহরণই যাদের একমাত্র জীবিকা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও চাহিদার এই দেশে তাদের অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়। যে কারণে সরকার 'জাল যার জলা তার' নীতির আওতায় কেবল মৎস্যজীবী সমিতিকেই ইজারা গ্রহণের অধিকার দিয়েছিল। প্রত্যাশা করা হয়েছিল, জলাশয়ে জলাশয়ে নির্বিঘ্নে জাল ফেলার সুযোগ তাদের নিজের ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে সহায়তা করবে। বাস্তবে জালওয়ালা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনের জালে আটকা পড়েছে। তাদের কেউ কেউ এখনও জাল বায় বটে; লাভের গুড় ওঠে জলমহালে আধিপত্য বিস্তারকারী প্রভাবশালীর ঘরেই। বিলের পাড়ে পাড়ে ভুয়া মৎস্যজীবী সমিতি গড়ে ওঠার নজিরও কম নয়। অনেকেই পিতৃপুরুষের পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন পার করছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার হরিহরদী জেলেপল্লীর শতাধিক জেলেকে আরও করুণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কারণ, ব্রহ্মপুত্র নদের মতো উন্মুক্ত জলাশয় ইজারার বিধান নেই। সেদিক থেকে নদী-তীরবর্তী জেলে সম্প্রদায় অপেক্ষাকৃত মুক্ত জীবিকার অধিকারী। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাদের নদীতেই নামতে দিচ্ছে না। আমরা মনে করি, সন্ত্রাসীরা জেলেদের মৌলিক নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতি আইনের শাসনের জন্য অশনি সংকেত। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, আইনের হাতই সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রশাসনকে এর প্রমাণ দিতে হবে। সোনারগাঁয়ের জেলেদের নদীতে নামতে না পারার ঘটনাকে স্থানীয় সংকট হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। ব্রহ্মপুত্র নদে যদি হরিহরদীর জেলেদের অধিকার সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে অন্যান্য নদী এবং নদী-তীরবর্তী জেলে সম্প্রদায়ও সন্ত্রাসীর থাবা থেকে রেহাই পাবে না। সন্ত্রাসী নয়, আমাদের নদ-নদী জেলেদের অভয়ারণ্য হোক। তাদের জাল ভরে উঠে আসুক সবার পুষ্টি ও সমৃদ্ধি।

No comments

Powered by Blogger.