স্বাধীনতার ঘোষণা ও একটি প্রশ্নের উত্তর by শাহ আহমদ রেজা

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কি-না, এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিতর্কের এখনও অবসান হয়নি। এর কারণ নিহিত রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্বেষপূর্ণ অবস্থানের মধ্যে। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী থেকে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীর উত্তম পর্যন্ত অন্য সবার ভূমিকা ও অবদানকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে দলটি নিজেদেরই প্রাণপুরুষকে বিতর্কিত করে চলেছে।

অথচ শেখ মুজিব কোনো ‘অখ্যাত’ ব্যক্তি ছিলেন না বরং তাকে কেন্দ্র করেই স্বাধীনতা যুদ্ধমুখী ঘটনাপ্রবাহ আবর্তিত হয়েছিল। প্রধান নেতা ছিলেন বলে শেখ মুজিবের কার্যক্রম জানার জন্য বেশি পরিশ্রমও করতে হয় না। দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং ঘটনাপ্রবাহে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিবরণী থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় সবকিছু।
স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া-না দেয়া সম্পর্কে জানতে হলে ১৯৭১ সালের ৭ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঘটনাবলির তথ্যনির্ভর পর্যালোচনা করা দরকার। দেখা যাবে, ৭ মার্চের বহুল আলোচিত ও জাতিকে বহুবার বাজিয়ে শোনানো ৯১ বাক্যের ভাষণের একেবারে শেষবাক্যে ‘মুক্তির সংগ্রাম’ ও ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ উচ্চারণ করলেও ভাষণটিতে শেখ মুজিব আসলে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সামরিক আইন প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবি ও পূর্বশর্ত হাজির করেছিলেন (যদিও ১-২-৩-৪ করে নয়)। এর মাধ্যমে তিনি শুধু আলোচনার দরজাই খুলে দেননি, একই সঙ্গে ‘আপনি আসুন’, ‘আপনি দেখে যান’ ধরনের কথার আড়ালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি ঢাকা সফরে আসারও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ভাষণের পরপর সন্ধ্যায় পৃথকভাবে প্রচারিত বিবৃতিতেও একই দাবি, বক্তব্য ও আমন্ত্রণের পুনরাবৃত্তি ছিল। ভাষণ ও বিবৃতির মধ্যে পার্থক্যও ছিল বিস্তর। আবেগাপ্লুত ভাষণের তুলনায় বিবৃতির ভাষা ছিল খুবই মার্জিত ও সংযত এবং বড় কথা, বিবৃতির কোথাও স্বাধীনতা শব্দের উল্লেখ পর্যন্ত ছিল না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শেষের কথাটুকু। ‘মুক্তির সংগ্রাম’ ও ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ধরনের বাগাড়ম্বরের ধারেকাছে না গিয়ে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘সংগ্রামের বর্তমান পর্যায়ের লক্ষ্য হলো অবিলম্বে সামরিক আইনের বিলোপ এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। (পূর্ণ বিবৃতির জন্য দৈনিক সংবাদ, ৮ মার্চ, ১৯৭১)
এখানে তিনটি বিশেষ তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। প্রথম তথ্যটি হলো, ৬ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠক চলাকালে একজন সিনিয়র সেনা অফিসার শেখ মুজিবের কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। বার্তা পাওয়ার পর শেখ মুজিব কামাল হোসেনকে এমন একটি বিবৃতি লিখতে বলেছিলেন যাতে রেসকোর্সের জনসভায় দেয়া ভাষণের পর তিনি আইনের দিক থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন। বিবৃতিটি জনসভার পর তাজউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পরদিনের সংবাদপত্রে সে বিবৃতি ছাপাও হয়েছিল, কিন্তু বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল রেসকোর্সের ভাষণ।
দ্বিতীয় তথ্যটি হলো, ৭ মার্চ সকালে ইয়াহিয়া খান টেলিফোন করে শেখ মুজিবকে বলেছিলেন, তিনি যেন রেসকোর্সের জনসভায় এমন কিছু না বলে বসেন যা থেকে ফিরে আসা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ইয়াহিয়া খান আসলে ইউডিআই তথা একপাক্ষিক স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে নিষেধ করেছিলেন। তথ্যটি জানিয়েছেন ইয়াহিয়া খানের মন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্বদ্যািলয়ের সাবেক অধ্যাপক জি ডব্লিউ চৌধুরী (‘দ্য লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’, লন্ডন, ১৯৭৪)। টেলিফোনে শেখ মুজিবের সঙ্গে কথা বলার সময় সাক্ষী হিসেবে ইয়াহিয়া খান তাকে উপস্থিত রেখেছিলেন। উল্লেখ্য, জি ডব্লিউ চৌধুরী মুজিব-ইয়াহিয়ার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারীর দায়িত্ব পালন করতেন।
তৃতীয় তথ্যটি হলো, রেসকোর্সের ভাষণে শেখ মুজিব নাকি স্বাধীনতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রনেতাদের চাপে তাকে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলতে হয়েছিল। এ ব্যাপারে সরাসরি ভূমিকা রেখেছিলেন ডাকসুর সহ-সভাপতি আসম আবদুর রব।
৭ মার্চের ভাষণ ও বিবৃতির পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পর্যায়ক্রমিক বৈঠকের পর্যালোচনায়ও পরিষ্কার হবে, শেখ মুজিবকে ঘিরে যে ইতিহাস প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে তার অনেক কিছুই সঠিক নয়। কারণ, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতা ও উপদেষ্টাদের কেউই কখনও বলেননি যে, আলোচনার কোনো পর্যায়ে স্বাধীনতার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছিল। এমনকি শেখ মুজিবের ওপর সব দায়দায়িত্ব চাপিয়ে প্রকাশিত পাকিস্তান সরকারের শ্বেতপত্রেও উল্লেখ করা হয়নি যে, তিনি স্বাধীনতার দাবি তুলেছিলেন বলেই আলোচনা ভেঙে গিয়েছিল। দুই উপদেষ্টা ড. কামাল হোসেন ও প্রফেসর রেহমান সোবহানের বিবরণীতে বরং জানা গেছে, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য ছিল এক পাকিস্তানভিত্তিক সমাধান অর্জন করা। ১৬ মার্চের প্রথম বৈঠকেই শেখ মুজিব ইয়াহিয়া খানকে বলেছিলেন, বিশেষ করে সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া অন্য কোনো কিছুই চলমান উত্তেজনা কমানোর জন্য যথেষ্ট হবে না। জবাবে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, সংবিধান রচনার আগে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হলে দেশে আইনগত শূন্যতার সৃষ্টি হবে। শেখ মুজিব তখন উভয় পক্ষের আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে ড. কামাল হোসেন তার প্রস্তাবে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ইয়াহিয়া খান এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা আদেশ জারি করবেন, যা সামরিক আইন প্রত্যাহার করার ও সংবিধান গৃহীত হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কে আইনসম্মত করবে।
১৭ মার্চের বৈঠকে দেয়া প্রস্তাবে শেখ মুজিব বলেছিলেন, দুই অঞ্চলের জাতীয় পরিষদ সদস্যরা প্রথমে পৃথক পৃথক অধিবেশনে দুটি পৃথক সংবিধান রচনা করবেন এবং পরে এক যৌথ অধিবেশনে দুটির সমন্বয়ে পাকিস্তানের জন্য একটি একক সংবিধান রচনা করা হবে। শেখ মুজিবের প্রস্তাবে ইয়াহিয়া খান একটি বিশেষ ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছিলেন—যাকে অন্তর্বর্তীকালীন সাংবিধানিক ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হবে। সেদিন আলোচনায় ‘অগ্রগতি’ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসার সময় শেখ মুজিবকেও ‘খুবই হর্ষোত্ফুল্ল’ দেখা গিয়েছিল। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে। এই সমঝোতা অনুযায়ী ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন, তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাঁচজন করে মন্ত্রী নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হবে। সমঝোতাপূর্ণ সে পরিবেশে শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া খান ২০ মার্চ প্রথমবারের মতো সহকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত ঘোষণায় নিচের তিনটি বিষয় থাকবে—
১. সামরিক আইন প্রত্যাহার; ২. জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর; এবং ৩. পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ‘ব্যাপক স্বায়ত্তশাসনের’ ব্যবস্থা।
২০ মার্চের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ মার্চ ইয়াহিয়া খানের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবের কাছে প্রস্তাবিত ঘোষণার খসড়া পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। এতে বলা হয়, প্রদেশগুলোতে মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার দিন থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাবকে অসম্পূর্ণ আখ্যা দিয়ে নিচের দুটি বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছিল—১. প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা অবিলম্বে প্রচার করতে হবে; এবং ২. যেহেতু মন্ত্রিসভা গঠন করতে দেরি হতে পারে সেহেতু নতুন গভর্নর নিযুক্তি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা প্রেসিডেন্টের ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার সাতদিনের মধ্যে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
এভাবেই মুজিব-ইয়াহিয়ার আলোচনা এগিয়ে চলছিল। ২৪ মার্চের সর্বশেষ সমঝোতায়ও বলা হয়েছিল—১. অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে; ২. ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন; ৩. কেন্দ্রের আগে প্রদেশগুলোতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে (এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারত এবং আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ত); এবং ৪. দুই অঞ্চলের জাতীয় পরিষদ সদস্যরা প্রথমে পৃথক পৃথক অধিবেশনে দুটি পৃথক সংবিধান রচনা করবেন এবং পরে যৌথ অধিবেশনে একটি একক সংবিধান রচনা করা হবে। ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছিল, উপরের বিষয়গুলোসহ প্রেসিডেন্টের ঘোষণা কবে প্রচার করা হবে সেকথা পরদিন জেনারেল পীরজাদা টেলিফোনে ড. কামাল হোসেনকে জানিয়ে দেবেন। শেখ মুজিব ২৫ মার্চ সারাদিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন এবং রাত সাড়ে দশটায়ও কামাল হোসেনের কাছে জানতে চেয়েছেন, তিনি পীরজাদার টেলিফোন পেয়েছেন কি-না।
২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবের সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাত্ করেছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তাদের কারও বিবরণীতেই এমন কোনো তথ্য জানা যায় না যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা তৈরি করেছিলেন। তাছাড়া শেখ মুজিবের বাসভবন থেকে তাজউদ্দিন আহমদের বাসায় গিয়ে কামাল হোসেনরা দেখেছিলেন, পাক সেনাদের আক্রমণের মুখে পিলখানা থেকে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা বেরিয়ে পড়েছেন। অর্থাত্ ইপিআরের ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে শেখ মুজিবের ঘোষণা প্রচার করার মতো কোনো বাঙালি সৈনিক পিলখানায় ছিল না। ওদিকে শেখ মুজিব গ্রেফতার বরণ করেছিলেন রাত ১২টার পরপর। সুতরাং এমন কোনো দাবি মেনে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে যে, শেখ মুজিব ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তেমন ইচ্ছা বা পরিকল্পনা থাকলে সেকথা তিনি কামাল হোসেনদের কাছেও জানাতে পারতেন। তাছাড়া একটি সরকার ও মুক্তিবাহিনী গঠন করা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান পূর্বশর্ত। এ দুটির কোনোটিই শেখ মুজিব গঠন করে যাননি, যার ফলে যুদ্ধের দিনগুলোতে প্রতি পদে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে বাধাগ্রস্ত ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
এভাবে তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণে প্রতিষ্ঠিত হবে, শেখ মুজিব অন্তত ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা দেননি। ২৫ মার্চের সর্বশেষ বিবৃতিতে তিনি বরং ২৭ মার্চ হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণাকারী কোনো নেতার পক্ষে হরতালের ডাক দেয়া সম্ভব নয়। ঘোষণা দেয়া সংক্রান্ত দাবিটিও তাই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। ঘটনাপ্রবাহে বরং প্রমাণিত হয়েছে, পাকিস্তানভিত্তিক সমাধানই ছিল শেখ মুজিবের লক্ষ্য। তার সেদিনের এই ভূমিকার দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে—১. আলোচনার আড়ালে স্বাধীনতামুখী আন্দোলনকে প্রশমিত করা; অথবা ২. সঙ্কটকে আরও জটিল করার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পথে স্বাধীনতাকে অনিবার্য করে তোলা। এ দুটির মধ্যে যে ব্যাখ্যাই গ্রহণ করা হোক না কেন, প্রাসঙ্গিক তিনটি তথ্য ও বিষয়কে বিবেচনায় রাখতে হবে—১. শেখ মুজিব স্বাধীনতার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে যাননি বরং যুদ্ধের সূচনালগ্নেই গ্রেফতার বরণ করেছিলেন; ২. স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি সরকার ও মুক্তিবাহিনী গঠন করে যাননি; ৩. এক পাকিস্তানের জন্য সচেষ্ট ছিলেন বলেই গ্রেফতার বরণ করার প্রাক্কালেও কামাল হোসেনের কাছে তিনি জেনারেল পীরজাদার টেলিফোন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানভিত্তিক সমাধানের জন্য চেষ্টার আড়ালে শেখ মুজিব নিয়মতান্ত্রিক পথে স্বাধীনতা অর্জনের কৌশলও নিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু সে কৌশলের বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি।
তথ্যসূত্র :
১. ড. কামাল হোসেনের বিবরণী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র, ১৫শ খণ্ড, পৃ : ২১০-৭৮; ২. প্রফেসর রেহমান সোবহানের নিবন্ধ, ‘নিগোশিয়েটিং ফর বাংলাদেশ : এ পার্টিসিপ্যান্টস ভিউ’, সাউথ এশিয়ান রিভিউ, জুলাই, ১৯৭১; ৩. জি ডব্লিউ চৌধুরী, ‘দ্য লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’, লন্ডন, ১৯৭৪; ৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্রের দ্বিতীয় খণ্ডে প্রকাশিত রিপোর্ট এবং বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি।
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
ই-মেইল : shahahmadreza@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.