নির্বাচন ও তিয়াত্তরের অধ্যাদেশের সংশোধন দরকার-অনির্বাচিত উপাচার্য

চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল ধরে অনির্বাচিত উপাচার্যদের সদর্প পদচারণে প্রমাণিত হয় যে সরকারি খাতের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত দেউলিয়াপনা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর, রাজশাহীতে এক যুগ, চট্টগ্রামে দুই দশক ও জাহাঙ্গীরনগরে চার বছরের বেশি সময় ধরে আইন অনুযায়ী ভিসি প্যানেল গঠিত হয় না।


এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী খোঁড়া যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁর কথায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন চলছে, সেখানে হস্তক্ষেপ করার কোনো দায় সরকারের নেই। সরকারের ঘুঁটি না চালানো সত্য হলে মান্যবর সিনেট সদস্যদের দায়িত্ব ছেড়ে বাড়ি যাওয়া উচিত।
প্রতিটি দলীয় সরকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাঁবে রাখতে চায়। আর সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক কোনো সংস্কারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোকে লেজুড় হিসেবে রেখে নির্বাচন কমিশনকে ফাঁকি দেওয়া এবং ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিজেদের দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করার নামে যখন যা বলা দরকার, তখন তারা তা-ই বলে থাকে। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়েই ক্যাম্পাসে কথিত ছাত্ররাজনীতির বৈধতা দেওয়া হয়। ছাত্রশক্তি দিয়েই নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সাফল্য এল। অথচ ছাত্রদেরই ভোটাধিকার হরণ করা হলো! ছাত্র সংসদ শ্মশান কেন, তার সদুত্তর আমরা পাই না। কিন্তু দলীয় সুরে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতায় সরব হতে দলীয় শিক্ষক ও ছাত্রনেতাদের কোনো ক্লান্তি নেই।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি খুঁজে বের করতে সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদেরাও দলীয় ভিত্তিতে ভিসি ও শিক্ষক নিয়োগের অশুভ প্রতিযোগিতা ও ধারাবাহিকতার লাগাম টানতে সার্চ কমিটির ধারণাকে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়াকে ত্রুটিমুক্ত করে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে সরকারের কোনো চিন্তা আছে বলে আমাদের জানা নেই। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে বলা আছে, কোনো ভিসির পদত্যাগ বা অন্য কারণে পদ শূন্য হলে অস্থায়ী ভিত্তিতে ভিসি নিয়োগ করা যাবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ প্যানেল তৈরি করতে হবে। আইনের ফাঁক নয়, প্রকৃতপক্ষে বিদ্যমান আইনের চরম লঙ্ঘন কিংবা অপব্যবহার ঘটছে। সিনেটগুলোর উচিত এর ব্যাখ্যা দেওয়া।
বিলম্বে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছেন। এই সমস্যাটি মূলগতভাবে রাজনৈতিক ব্যাধি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর মুঠো আলগা করতে রাজনীতিকদেরই, বিশেষ করে এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রীদের আন্তরিক হতে হবে। নির্বাচনের ভয়ে ভীত চার উপাচার্য ও তাঁদের সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের পর্দার আড়ালের তদবির ছেড়ে সোজা রাস্তায় নির্বাচন মোকাবিলায় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। আমরা অবিলম্বে সিনেটের ভিসি প্যানেল গঠন-প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করা এবং একই সঙ্গে ১৯৭৩ সালের আইনে উপযুক্ত পরিবর্তন আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাই।

No comments

Powered by Blogger.