টাকা পেতে ঘুষ দাবির অভিযোগ-লিবিয়াফেরত কর্মীদের বকেয়া পাঠিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান by শরিফুল হাসান

লিবিয়ার একটি চীনা নির্মাণপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ফেরত আসা তার কর্মীদের দুই মাসের বকেয়া বেতন ঢাকায় পাঠিয়েছে। ওই কর্মীদের এই টাকা শিগগিরই দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বকেয়া বেতন পাওয়ার খবরে আনন্দিত ওই কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, লিবিয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাঁদের তদারককারী বাংলাদেশি কর্মকর্তা এ জন্য ঘুষ


দাবি করছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোস্তফা কামাল নামের ওই কর্মকর্তা। তিনিও দেশে ফেরত এসেছেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়ার বেনগাজির চীনা নির্মাণপ্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বাংলাদেশে ফেরা তার মোট ৫৪৫ জন কর্মীর তালিকাসহ বকেয়া বেতন পাঠিয়েছে। তবে তালিকায় একই নাম কয়েকবার এসেছে। কিছু নামের বিপরীতে টাকা আসেনি। সব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই শেষ হলেই কর্মীরা টাকা পেয়ে যাবেন।
লিবিয়াফেরত মিজানুর রহমান, আসাদুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, আতিয়ার রহমান, মোহাম্মদ আলম, ওমর ফারুক, কাইয়ুম, শামসুর রহমানসহ আরও কয়েকজন প্রথম আলোকে জানান, তাঁরাসহ ৫০০-৬০০ জন বাংলাদেশি বেনগাজির চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশনে চাকরি করতেন। লিবিয়ায় সংঘাত শুরু হলে গত বছরের মার্চে তাঁরা দুই মাসের বেতন বকেয়া রেখেই দেশে ফেরেন। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বকেয়া বেতন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেশে ফেরার পর তাঁরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁরা জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠান তাঁদের সবার পাওনা বিএমইটিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু তাঁদের মতো দেশে ফেরা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ঘুষ দাবি করায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
গত বছরের ২৩ মার্চ দেশে ফেরা আসাদুল ইসলাম চীনা প্রতিষ্ঠানটিতে কার্পেন্টার (কাঠমিস্ত্রি) ছিলেন দুই মাসের বেতন বাবদ তাঁর পাওনা রয়েছে ৮০০ দিনার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ হাজার)। সমপ্রতি তিনি ওই টাকা আসার খবর পেয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই প্রতিষ্ঠানে তাঁদের বাংলাদেশি বস (তদারককারী কর্মকর্তা) মোস্তফা কামাল বকেয়া টাকা দেশে আসার খবর জানান এবং ওই টাকা পেতে হলে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন, নয়তো বকেয়া টাকা দেওয়া হবে না।
একই অভিযোগ করেন সেখানে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করা মেহেরপুরের আতিয়ার, পাবনার শামসুর, বগুড়ার সিদ্দিকসহ অন্যরা। আতিয়ার বলেন, ‘লিবিয়া থেকে এক কাপড়ে চলে আসতে হয়েছে। এখন যদি বকেয়া পেতে ঘুষ দিতে হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কারও কাছে ঘুষ চাইনি; বরং আমারও আড়াই লাখ টাকার মতো বকেয়া আছে।’
জানতে চাইলে বিএমইটির পরিচালক (কল্যাণ) মোহসিন খান বলেন, ‘প্রবাসী কর্মীদের কাছে অনুরোধ, তাঁরা যেন কাউকে কোনো ধরনের ঘুষ না দেন। লিবিয়া থেকে কর্মীদের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকের পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র মেলাব। এরপর প্রত্যেকের ব্যাংক হিসাবে তাঁদের বকেয়া বেতন পাঠানো হবে। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।’

No comments

Powered by Blogger.