শুধু আশ্বাস নয়, কাজেও প্রমাণ দিতে হবে-সীমান্তে প্রাণহানি রোধ

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বহুবার প্রতিবাদ করা হয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকেও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছেও একাধিকবার।


কিন্তু সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা বন্ধ হয়নি। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি বাংলাদেশের জনসাধারণের তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। খবর পাওয়া গেল, সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত, বিএসএফ সীমান্তে এমন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে, যা প্রাণঘাতী নয়। এটি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ।
নয়াদিল্লিতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী দুটির মধ্যে পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠক শেষে গত শনিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফের মহাপরিচালক রমণ শ্রীবাস্তব ভারতের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেছেন, প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি হবে পরীক্ষামূলক; সাফল্য পাওয়া গেলে দুই দেশের প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার সীমান্তে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে বিজিবি সীমান্তে যেকোনো ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
বিষয়টি যেন এমন না হয় যে, বাংলাদেশ সীমান্তে কথিত ‘অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে’, এই আশ্বাসের বিনিময়েই বিএসএফ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্যই সীমান্তে অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করতে হবে, ‘সীমান্তে অপরাধ দমনের’ সময় নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের কোনোভাবেই হত্যা করা চলবে না। বাংলাদেশ তাদের সব সময় বলে আসছে, এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। কিন্তু বিএসএফ ‘সীমান্তে অপরাধ দমনের সময়’ সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে কাজ করবে বলে বারবার আশ্বাস দিলেও তাদের গুলিতে নিরস্ত্র বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনা অব্যাহত থেকেছে। আমরা আশা করতে চাই, এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি আর ঘটবে না। নিরস্ত্র বেসামরিক লোকদের ওপর প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার পরীক্ষামূলকভাবে নয়, স্থায়ীভাবেই বন্ধ করা উচিত।
সীমান্তে চোরাচালান, নারী-শিশু পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সীমান্তের এপার-ওপার চলাচল ইত্যাদির অভিযোগ ভারতের পক্ষ থেকে করা হয়। সেসব অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ যে সম্পূর্ণভাবে একমত, তা নয়। কিন্তু সমস্যাগুলো সমাধানে বাংলাদেশ অবশ্যই আগ্রহী। এ লক্ষ্যে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ পরিদর্শন ইত্যাদির উদ্যোগও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা অবশ্যই ফলপ্রসূ হতে পারে। কিন্তু এসব পদক্ষেপের বিনিময়ে নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে—বিষয়টি এভাবে দেখা উচিত নয়। সর্বজনীন মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনকানুনের প্রতি অনুগত থেকেই ভারতের এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি এড়িয়ে অপরাধ দমন সম্ভব হয়। বাংলাদেশ অবশ্যই এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে।

No comments

Powered by Blogger.