বিশেষ সাক্ষাৎকার-উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে by নজরুল ইসলাম

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ১৯৪১ সালে শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ থেকে ১৯৬১ সালে স্নাতক সম্মান ও ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।


এ ছাড়া তিনি কানাডা (১৯৬৪-৬৭), যুক্তরাষ্ট্র (১৯৭৫) ও যুক্তরাজ্যে (১৯৭৯) উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। স্বাধীন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলামের ভূগোল, পরিবেশ ও নগরায়ণ বিষয়ে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় গ্রন্থিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৩ এবং গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহসান হাবীব

প্রথম আলো  দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার খবর প্রায়ই পত্রিকায় আসে । শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা এমনটা কেন হলো?
নজরুল ইসলাম  বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি আছে। বিগত জোট সরকারের সময় তা বেপরোয়া রূপ লাভ করেছিল। যে কারণে বেশ কয়েকজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অপসারণ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তাঁদের বিচার হওয়া উচিত। এ জায়গাটিতে আমরা হয়তো কিছুটা ধীরগতির। এসব ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে এখন অনিয়ম-দুর্নীতি একেবারে বন্ধ না হলেও অনেক কমে গেছে বলে আমি মনে করি। আর্থিক দুর্নীতি নেই বললেই চলে, তবে অনিয়ম হয়।
প্রথম আলো  দলীয়করণ প্রচণ্ড মাত্রায় আছে। এসব প্রতিকার কীভাবে হবে? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কী করতে পারে?
নজরুল ইসলাম  প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব আইনে চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন আইনি কাঠামো, তাতে তারা নিজ শক্তিতে চলতে পারে। দলীয়করণের ব্যাপারে ইউজিসির ভূমিকা রাখার তেমন সুযোগ নেই। তবে বড় ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম হলে তখন নালিশ হয়। আদালতে মামলা হয়। সেটা ইউজিসিও করে। নিয়োগের ব্যাপারে নালিশ এলে আমরা খোঁজ নিই। আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে তদারকি করি। অনিয়ম, দুর্নীতির ক্ষেত্রে প্রধানত ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের। সেখানে সিন্ডিকেট আছে। সিনেট আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তিশালী প্রতিনিধিমূলক একটা পরিষদ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখা আছে। তারা যদি না পারে, তারপর সরকার, ইউজিসি এবং সংসদ আছে। সংসদে জবাবদিহি করতে হয়। স্থায়ী কমিটি ডেকে নিয়ে আসে। যে দেশে গণতান্ত্রিক সংসদ আছে, মুক্ত গণমাধ্যম আছে, সে দেশে দুর্নীতি-অনিয়ম বেশি দিন চলতে পারে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ইউজিসি সরাসরি ধরতে পারে। ইউজিসি সেটা করছেও। আগে কোনো তদারকি করা হয়নি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনও ছিল দুর্বল। সেই দুর্বল আইনের খেসারত আমরা এখনো দিচ্ছি।
প্রথম আলো  উচ্চশিক্ষার মানের দিক থেকে আমরা অন্যান্য দেশের থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি, অধোগতি দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নেই।
নজরুল ইসলাম  আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান ঐতিহাসিকভাবে কমেছে, এটা মনে করি না। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়তো উঠে গেছে। স্বাধীনতার পর এই ৪০ বছরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা পরিমাপের কিছু সূচকের দিকে তাকালে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। অবকাঠামো, শিক্ষকসংখ্যা, পিএইচডিধারী অধ্যাপক, প্রকাশনা ইত্যাদিতে চমৎকার অগ্রগতি দেখা যাবে। আমাদের নিজস্ব ধারায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আবার খারাপও হয়েছে—যেমন সবাই পাস করছে না বা ডিগ্রি পেয়েও ভালো শিখে আসেনি। অগ্রগতি হয়েছে অনেক, তবে আবার নিম্নগতিও আছে।
প্রথম আলো  বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ধরনের গবেষণা সহায়তা দেওয়া হয় বা যে মানের গবেষণা করা হয়, সে মানের গবেষণার ঘাটতি আছে এখানে।
নজরুল ইসলাম  আমি এটা মনে করি না। কেননা, গবেষণার ফলাফল আসে জার্নালে। দুই দশক আগে এ দেশে জার্নাল ছিল গোটা বিশেক, এখন তো ৩৫০টির মতো।
প্রথম আলো  এগুলো কতটা মানসম্পন্ন?
নজরুল ইসলাম  সব মানসম্পন্ন না। তবে গবেষণা না হলে এত জার্নাল কীভাবে বের হয়? সংখ্যার দিক থেকে ব্যাপক, গুণগত মানের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই। আমাদের বিজ্ঞানীরা ভূরি ভূরি প্রবন্ধ, বই প্রকাশ করেন বিদেশ থেকে। প্রখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে। এগুলোর তালিকা করলে চমকপ্রদ তথ্য আসবে।
প্রথম আলো  প্রযুক্তি স্থানান্তরের কাজটি বিদেশে যেভাবে দ্রুতগতিতে ঘটেছে, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা যত দ্রুত খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, সেখানে আমাদের গতিধীর, আমরা পিছিয়ে পড়েছি।
নজরুল ইসলাম  আমরা দেরিতে শুরু করেছি। আগের থেকে এখন দ্রুত হচ্ছে, সঠিক ধারায় যাচ্ছে। এক-দুই বছরে সব বদলে যাবে না। তবে চিন্তা ঠিক আছে কি না, দর্শন ঠিক আছে কি না, গতি ঠিক আছে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো  উচ্চশিক্ষার সংখ্যাগত প্রসার লক্ষণীয় হলেও মানের ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়েছে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মানোন্নয়নের জন্য কী করার আছে?
নজরুল ইসলাম  ইউজিসির কাজ হলো, যেখানে মান নেই সেখানে মান প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করা, প্রয়োজনে বাধ্য করা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আইন হলো। এসব প্রতিষ্ঠান যেন ন্যূনতম আইনে আসতে বাধ্য হয়—ক্যাম্পাস, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ইত্যাদি থাকা আইনতভাবে বাধ্য করার ব্যাপার আছে। অন্যদিকে প্রণোদনা বা সহযোগিতা দেওয়ার ব্যাপারও আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে যেমন আমরা সাহায্য করি, তেমন সাহায্য করব। যেমন, আমরা সেমিনার, সম্মেলন, প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান করি। তা ছাড়া সরাসরি কারিগরি ও অর্থসাহায্য প্রদান।
হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট আমরা নিয়েছি দুই বছর হলো। এর আওতায় উচ্চক্ষমতার ইন্টারনেট-সুবিধা, লাইব্রেরি উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন করা হবে। আর আছে ৩২২ কোটি টাকার শিক্ষা ও গবেষণা বরাদ্দ। সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মোটামুটি মানসম্পন্ন হিসেবে স্বীকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতাধীন।
প্রথম আলো  এই প্রকল্প তো সীমিত সময়ের আর ঋণের অর্থে চালিত। এই প্রণোদনা কীভাবে চলমান থাকতে পারে?
নজরুল ইসলাম  প্রকল্পটি সফট লোনে চালিত—৪০ বছরে ফেরতযোগ্য। সুদের হার ১ শতাংশেরও কম। এটাতে পাঁচ বছর চলবে। এর পরে আবার ঋণের দরকার হলে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া যাবে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ প্রায় ৩০টি দেশ নিচ্ছে। আমরাও নিতে পারব। সেতু, মহাসড়ক নির্মাণের জন্য আমরা ঋণ নিই, শিক্ষার জন্যও নিতে পারি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অর্থটার যেন সদ্ব্যবহার হয়। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের প্রকল্পটি চলমান রাখতে হবে—এখন ঋণ নিয়ে ও পরে নিজস্ব তহবিল থেকে। নিজস্ব তহবিল মানে সরকারি তহবিল। গবেষণায় সরকারি অর্থ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে আমরা গবেষণার পরিবেশ তৈরি করব। এগুলো চলমান রাখতে হবে।
প্রথম আলো  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্তত দুই ধরনের ব্যবস্থাপনা আছে। একদিকে উপাচার্য নির্বাচিত, অন্যদিকে মনোনীত। আবার তিয়াত্তরের অধ্যাদেশও মানা হচ্ছে না।
নজরুল ইসলাম  সরকার ও ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে তারা অধ্যাদেশ মেনে চলবে। না হলে অধ্যাদেশ বদল করবে। যদি অধ্যাদেশ বদল করতে নারাজ হয়, তাহলে তা মেনে চলতে হবে। বর্তমান সরকার দুই বছর ধরে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তাঁরা সরকার কর্তৃক সরাসরি নিযুক্ত—অগণতান্ত্রিকভাবে; তবে গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারা নিযুক্ত। সরকার কয়েক মাসের জন্য একজন সাময়িক উপাচার্য দিতে পারে। স্থায়ীভাবে নয়।
প্রথম আলো  উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এখনকার প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করেন?
নজরুল ইসলাম  স্বাধীনতার পর বিগত ৪০ বছরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার হয়েছে—সংখ্যাগত দিক থেকে অবশ্যই। স্বাধীনতা লাভের সময়ে আমাদের ছিল মাত্র ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রসংখ্যাও ছিল সীমিত। এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই ৩৪টি। পাশাপাশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাহিদা মেটাতে পারছিল না, তাই ১৯৯২ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ধারা তৈরি হয়েছে। আমরা ২০০৬ সালের মধ্যেই দেখি ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (৫৬টি ছিল, দুটি বন্ধ হয়ে গেছে)। সেখানে এখন ছাত্রসংখ্যা উন্মুক্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। তা ছাড়া এখন প্রায় এক হাজার ৮০০ কলেজের মধ্যে ৩৫০টিতে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পড়ার ব্যবস্থা আছে। এত বিশ্ববিদ্যালয়, এত কলেজ হওয়ার পরও আমাদের গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও (বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়সীদের কত অংশ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়ে) বড়জোর পাঁচ। পাশের দেশ ভারতে এখনই এটি প্রায় ১৩। পাকিস্তানেও প্রায় কাছাকাছি। থাইল্যান্ডে প্রায় ৪০। এ দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া মানুষের সংখ্যা খুব কম। এটা আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
আরেকটি কথা শিক্ষা শুধু সংখ্যাগত না, গুণগত। সংখ্যা বাড়ানো ও মান প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার আর্থিক সংস্থান, যোগ্য শিক্ষকের ব্যবস্থা করা। এসব কিছুর সঙ্গে যুক্ত হলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন পদ্ধতি বা ব্যবস্থাপনা। ব্যাপকভাবে এগুলোই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
প্রথম আলো  ২০০৬ সালে ইউজিসি ও বিশ্বব্যাংক পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ২০ বছর মেয়াদি একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিল। অনেকে একে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, উচ্চশিক্ষাকে ‘পাবলিক গুড’ থেকে ‘প্রাইভেট গুড’-এ পরিণত করার চেষ্টা বলে অভিযোগ করেন। সেই কৌশলপত্রটিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
নজরুল ইসলাম  কৌশলপত্রটির যে দিকগুলো প্রয়োগযোগ্য, সেগুলো আমরা বিবেচনা করি আর যেগুলো প্রয়োগযোগ্য নয়, যেমন আমব্রেলা অ্যাক্ট, সেটা বাদ। কিছু কিছু অংশ নেওয়ার আছে সেগুলো নেব, যেগুলো সম্ভব নয়, সেগুলো নেব না।
বাংলাদেশে এখনো উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট পরিমাণে ‘পাবলিক গুড’। সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজের প্রায় ৯০ শতাংশই সরকারের অর্থায়নে চলে। সেই পাবলিক গুডের মান আশানুরূপ হচ্ছে না হয়তো, কিন্তু প্রায় বিনা বেতনের শিক্ষা। কেউ বেতন দেয় ২০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় প্রত্যেকের কাছে মোবাইল ফোনের পেছনে ব্যয় করে প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা। কিন্তু বেতন ২০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করলে, বলবে দেবে না। তো ঠিক আছে সরকার দেবে। কিন্তু সরকারের এই টাকাটা কে দেবে? দেবে দেশের চাষি, মজুর, আপামর জনতা।
প্রথম আলো  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, এমনকি বেতন-ফির ক্ষেত্রে যে বিরাট বৈষম্য বিরাজ করছে।
নজরুল ইসলাম  ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা একদম অপছন্দ করি। ছাত্র ও শিক্ষকের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা সবারই এক রকম হওয়া উচিত। বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত। তা না হলে সেখানে কেউ যেতে চাইবে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গটি ভিন্নভাবে দেখতে হবে। আমাদের এখানে সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি খাত আছে। বেসরকারি খাতকে যদি আমরা স্বীকার করি, তাহলে আমাদের আইনের আওতায় তারা যেভাবে চালাতে চায় সেভাবে চলবে। এই দুটি ধারা আমরা মেনে নিয়েছি। যেমন, আমরা মেনে নিয়েছি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পাশাপাশি অস্তিত্ব।
প্রথম আলো  উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে কী কী বিষয়ের ওপর সরকারের নজর দেওয়া জরুরি মনে করেন।
নজরুল ইসলাম  আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়, এটা স্বীকৃত যে তা ৬ শতাংশ হওয়া উচিত। আমি মনে করি, উচ্চশিক্ষায় আমাদের বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা থেকে ১০ হাজার কোটি টাকায় অবিলম্বে উন্নীত করা উচিত। এটা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। ১৬ কোটি মানুষের দেশ মাত্র ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক দিতে পারি না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একজন অধ্যাপক যে বেতন পান, আমাদের অধ্যাপকেরা পান তার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বেতন ও শিক্ষক বেতন এক হওয়া চাই।
শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেও যে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, সেটা যথেষ্ট নয়। সার্বিকভাবে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেটি কোন খাত থেকে আসবে? নিশ্চয়ই কৃষি, স্বাস্থ্য বা যোগাযোগ থেকে নয়। আমি মনে করি সামরিক খাতের ব্যয় কমিয়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.