সময়ের প্রতিবিম্ব-স্বদেশে পূজ্যতেঃ রাজা, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতেঃ by এবিএম মূসা

প্রায় দেড় মাস সময় ঢাকা আর দিল্লির হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে-বসে কাটালাম। ঢাকায় ল্যাবএইডে চিকিৎসক-সাহিত্যিক, সাহিত্যিক-চিকিৎসকও বলা যায়, চিকিৎসক বরেণ চক্রবর্তী আমার হূদ্যন্ত্র পরীক্ষা করে বললেন, যদিও ১১ বছর আগে বিকল্প ব্যবস্থা বাইপাস হয়েছে, আবার জটিলতা দেখা দিয়েছে। হূদ্যন্ত্রের উন্নততর চিকিৎসা করতে হবে।


তিনিই ব্যবস্থা করে দিলেন, দিল্লির এসকর্টে চিকিৎসক অনিল সাকসেনা আমার বুকে পেসমেকার জাতীয় একই প্রক্রিয়ায় একটি যন্ত্র বসাবেন। কিছুদিন ল্যাবএইডের কেবিনে রইলাম নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। সময় কাটে দৈনিক পত্রিকা পড়ে। কী পড়ব, ২০-২৪ পৃষ্ঠায় সব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা, জনজীবনের দুর্ভোগ, চাল-তেলের ঊর্ধ্বগতি আর আন্তর্জাতিক ঘটনাবলিকে পেছনের পাতায় ঠেলে দিয়েছে ‘ক্রিকেট’। ব্যতিক্রম একমাত্র প্রথম আলোতে; আলোচিত, বিশ্বের অন্যান্য দেশের গণমাধ্যম, উচ্চতম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস’। চাল-তেলের ঊর্ধ্বগতি; তিনি তবু কিছুটা ঠাঁই পেয়েছেন।
ঢাকার পত্রিকায় সর্বত্র ‘ক্রিকেট আর ক্রিকেট’; আলোচনা-সমালোচনা, বিশেষজ্ঞ অভিমত আর প্রতিবেদনে মনে হচ্ছিল, নিত্যদিনের অনটন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঘোড়দৌড় অথবা বিদ্যুতের লুকোচুরি—সবই যেন জনগণকে কিছুদিনের জন্য ক্রিকেট-আফিম খাইয়ে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মাঝে খবর পড়ছি, ২৪ টাকা কেজির চালের জন্য বাপ ফার্মগেটে ট্রাকের পেছনে লাইন দিয়েছেন, ছেলে ক্রিকেটের মাঠে ঢুকতে তিন হাজার ৫০০ টাকায় কালোবাজারে টিকিট খুঁজছে। প্রতিবেদনগুলো পড়ে মনে হলো, বর্তমান ও অতীতের ক্রিকেটাররা কতখানি ভালো খেলছেন, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে ভালো লিখছেন।
ইতিমধ্যে একদিন প্রথম আলোর এক বিজ্ঞাপনে একজন ‘ক্রিকেটবিদ্বেষী’ প্রেরিত একটি ছোট চিঠি পড়লাম। পত্রটির শেষাংশে সম্পাদক জুড়ে দিলেন, ‘এ সম্পর্কীয় আর কারও কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য থাকলে লিখে পাঠান।’ সেই মন্তব্য বা চিঠি অবশ্য আমরা এখনো দেখতে পাইনি। যা-ই হোক, ক্রিকেট-ভারাক্রান্ত অথবা ক্রিকেটমণ্ডিত সংবাদপত্রের পাতাগুলোর মাঝে আপামর জনগণের, দেশের ও সরকারের হালচালের খবর সামান্য হলেও পেলাম। অন্য সময়ে সেগুলো প্রথম পৃষ্ঠায় শীর্ষ খবর হতো। চালের দর ৫০-এ পৌঁছেছে, সয়াবিন তেলের দাম শুধু বাড়ছে। লিবিয়াতে আটকে পড়া হতভাগ্য বাংলাদেশিদের খবর আর তাঁদের আপনজনের দুশ্চিন্তার কাহিনি। আগেই বলেছি, সবই ভেতরে ঠেলে দিয়েছে ক্রিকেট। একটি ব্যতিক্রম, তা হলো নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রুসেডের সব কাহিনি।
এই ইউনূস-ব্যাশিং তথা এই ইউনূস-হেনস্তাই আমার আজকের প্রতিবেদনের মূল বিষয়, যদিও শুরু করেছিলাম ক্রিকেট ফোবিয়া নিয়ে। তবে আগেই একটি কৈফিয়ত দিয়ে রাখি, আমি ক্রিকেটবিদ্বেষী নই। ৫০-৬০ দশকে বিশ্বের সেরা সব দলের টেস্ট খেলার রিপোর্ট করেছি। তখন অবশ্য ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির ডাংগুলি ছিল না। আমার দুটি ক্রিকেট দল ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর ঈগলেটস। বাংলাদেশের ক্রিকেটের হাঁটি হাঁটি পা পা কাহিনি আপাতত অজানা থাকুক। আজ শুধু নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের জন্য গৌরব অর্জনকারী ব্যক্তিটির সম্পর্কে কিছু বলব। বক্তব্য শুরু করতে আমার অনুপস্থিতিতে কী সব ঘটেছে, তার খোঁজখবর করলাম। প্রথমেই একটি মজার খবর পেলাম। একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের দর্শকনন্দিত উপস্থাপককে বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা চলবে না।’ তেজস্বী সাংবাদিক-সঞ্চালক সেই মধ্যরাতের আলোচনা পরিচালনায় সরাসরি অস্বীকৃতি জানালেন। অথচ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশে ইউনূস-হয়রানির মূল কারণ ব্যাখ্যা দিতে হিমশিম খেয়েছি।
ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় না হলেও ১৯৮১ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সময় ফেনীর ফুলগাজী থানার নতুন মুন্সিরহাটে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখি, কয়েক ডজন নারী ব্যাংক ভবনটির সামনে ভিড় করেছেন। অবাক হলাম, গ্রামের অসূর্যম্পশ্যা মা-খালা-ফুফুরা এখানে কেন? অথচ এসব অতি আপন আত্মীয়াও এক হাত লম্বা ঘোমটা না দিয়ে সামনে আসতেন না। পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানলাম, তাঁরা সবাই একটি অপ্রচলিত ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কেউ গাভি কিনেছেন, কেউ বা পরের বাড়িতে বর্গা খাটা স্বামীর জন্য দুটি হালের বলদ কিনেছেন। এমনকি, বহুদিন আগে বিলুপ্ত ঢেঁকি চালু করেছেন, ধান কিনে চাল বিক্রি করেছেন। তাঁদেরই কেউ নতুন ঋণ নিতে এসেছেন, কেউ বা কিস্তির টাকা শোধ দিচ্ছেন। অবাক হলাম দুটি কারণে। এক. গৃহস্থ ঘরের পর্দানশিন মেয়েরা ঘরের বাইরে এসে রুজির পথ পেয়েছেন। বেকার বা দিনমজুর স্বামী বা পিতা-পুত্রের ওপর নির্ভরশীল নন। মনে হলো, একটি নারী জাগরণ, বেগম রোকেয়া যা প্রত্যক্ষ করলে হয়তো তাঁর অবরোধবাসিনী বইয়ে নতুন অধ্যায় যোগ করতেন। দুই. যেখানে ঢাকা শহরে ছোট্ট একটি বাড়ি করার জন্য মতিঝিলপাড়ায় ব্যাংকের চৌকাঠ পেরোতে আমার বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে, সেখানে শুধু চেহারা দেখিয়ে লম্বা ঘোমটায় মুখ ঢেকে একজন গাঁয়ের মাতা-বধূ বিনা শর্তে, বিনা জামিনদারে টাকা ধার পাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সাংবাদিকসুলভ কৌতূহল বাড়ল। সেই কৌতূহল চরিতার্থ করার সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী-বর্ণিত ‘রক্তচোষা’ ঋণের কিছু রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। এর মূলে আবিষ্কার করলাম গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার কিছু দুর্বলতা, সমন্বয়হীনতা ও মনিটরিংয়ের অভাব। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে আলোচনা করছি না, তাই বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলাম না। শুধু একটি উদাহরণ দিই। একবার গ্রামে গিয়ে দেখলাম, পাশের দিনমজুর ঘটা করে হাজার টাকা খরচ করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের টাকা দিয়ে বলদ নয়, জামাই কিনেছেন। এ রকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। গ্রামীণ ব্যাংক একের টাকায় অন্যকে ঋণ দেয়। তাই বড় ব্যাংকের মতো আদালতে মানি স্যুট না করে গ্রাম্য মহাজনি প্রথায় টাকা আদায় করে, যা সমালোচিত হয়েছে।
দ্বিতীয়বার গ্রামীণ ব্যাংকের অন্য একটি মহৎ উদ্যোগের সঙ্গে পরিচিত হলাম। দেশে মোবাইল ফোন এল আশির দশকের প্রথম বিএনপি সরকারের আমলে। এক লাখ টাকায় একটি মোবাইল ফোন। একচেটিয়া ব্যবসা বিএনপির একজন মন্ত্রীর। আওয়ামী লীগ এসে বিএনপির নেতার একক রাজত্বের অবসান ঘটাল। আজকে গাঁয়ের চাষি মাঠে লাঙল চালানোর সময় কুয়েতে টেলিফোনে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এই অবদান, ঘরে ঘরে টেলিফোন পৌঁছে দেওয়ার জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনার সহায়তায় এগিয়ে এল গ্রামীণ ব্যাংকেরই সহযোগী নব-প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণফোন। লাখ টাকার ছোট্ট যন্ত্রটি ২০ হাজার টাকায় এল। খালেদ শামস তখন গ্রামীণ ব্যাংকের দ্বিতীয় ব্যক্তি, জাঁদরেল এই সিএসপি অফিসার এরশাদের সময় চাকরি করবেন না বলে স্বেচ্ছায় অবসর নিলে ড. ইউনূস তাঁকে লুফে নেন। একদিন খালেদ আমাকে নিয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে দেখা করলেন। মন্ত্রী সব শুনলেন, বুঝলেন, এবং ত্বরিত ব্যবস্থা নিলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ নাসিম ভাইকে। আওয়ামী লীগ সরকার মুঠোফোনের বাজার উন্মুক্ত করে দিল, যার সুযোগ ভোগ করছেন বর্তমানে কয়েক কোটি ব্যবহারকারী। বিএনপির এক লাখের এক বিঘতের যন্ত্রটি এক লাখের বদলে এখন তো আওয়ামী-রাজত্বে এক হাজার টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।
যা-ই হোক, নাসিম ভাই এক লাখ থেকে ২০ হাজারে আনলেন। কিন্তু গরিবের সহজলভ্য হবে কীভাবে? অপূর্ব উদ্ভাবনীশক্তি ড. ইউনূসের। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ফাইবার অপটিক্যালের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় গ্রামগঞ্জে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সহজলভ্য করলেন। বিচিত্র এক ব্যবস্থা করলেন, প্রতি ইউনিয়নে কোনো এক দুস্থ নারীকে একটি করে মোবাইল ফোনসেট দিয়ে দিলেন। গাঁয়ের দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসতে লাগলেন নারীদের কাছে। ১০ টাকা প্রতি মিনিটে সৌদি আরব, কুয়েত, দুবাই অথবা পাকিস্তানপ্রবাসী স্বামী বা পুত্রের সঙ্গে কথা বললেন মোবাইলে। ১০ টাকার পাঁচ টাকা পেলেন দুস্থ নারীটি, পাঁচ টাকা গ্রামীণ ব্যাংক ও এর সহযোগী গ্রামীণফোন। ড. ইউনূস সুদূর বিশ্বকে বাংলায়, গ্রামে পৌঁছে দিলেন। আর প্রতি গ্রামে একটি দুস্থ নারীর পরিবারের আয়ের নতুন পথের সন্ধান দিলেন।
এবার দিল্লির এসকর্টে অবস্থানের কাহিনি। এখানে তিন-চার দশক আগের পরিচিত সাংবাদিক ছিলেন বেশ কয়েকজন। কলকাতায় আনন্দবাজার-এর ব্যুরো চিফ চঞ্চল সরকার, হিন্দুস্তান টাইমস-এর সম্পাদক হিরণ্ময় কারলেকা ও নাম ভুলে যাওয়া আরও অনেকে আমার মতোই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকে আসতে পারলেন না, খবর পেয়ে টেলিফোন করলেন। কেউই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির খবর জানতে চাইলেন না। প্রথমেই চরম প্রশ্নটি, ‘হোয়াই ইজ শি আফটার হিম?’ উত্তর দেব কী, আমিই কী ছাই জানি? মজার ব্যাপার হলো, যেদিন নয়াদিল্লি পৌঁছালাম, সেদিন সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া, যার দৈনিক প্রচারসংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ। হিন্দুস্তান টাইমস, মিড-ডে-এর প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান খবর আদালতে নোবেল লরিয়েট। পরবর্তী কয়েক দিন প্রাধান্য দিয়ে ছাপা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, বিলেতের গার্ডিয়ান, ইকোনমিস্ট ও ওয়েবসাইটে উপমহাদেশের একজন নোবেল বিজয়ীর বিড়ম্বনার খবর, সঙ্গে ওবামা-ইউনূসের আর নোবেল পদক গ্রহণের ফাইল ফটো। হিলারির চিঠি ছেপেছে গুরুত্বের সঙ্গে। কেউ আবার ইসলামি সম্মেলনের সময় নির্ধারিত ওবামা-হাসিনা বৈঠকটি যে হবে না, সেটিও কেন জানি যোগ করে দিয়েছে। এসব পড়ে ‘ক্ষুব্ধ’ হলাম; আমরা যে গেঁয়ো যোগীকে ভিক্ষা দিই না, তাঁকে নিয়ে বিদেশিদের এত মাতামাতি কেন?
বহু চিন্তাভাবনা করেছি, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের ক্ষোভের কারণ যা-ই হোক, অভিযোগটি কী? অভিযোগকারীরা বোঝালেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা একই প্রতিষ্ঠানের অন্যত্র সরিয়েছেন। সহজ কথায় বুঝলাম, একই জামার ডান থেকে বাঁ পকেটে নিয়েছেন। এই যদি তাঁর অপরাধ হয়, তবে শেয়ারবাজার থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কারা, কোথায় সরিয়েছেন; কোথায় পাচার হলো, তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো উদ্যোগ নেই কেন? ঋণখেলাপিদের হাজার লাখ কোটি টাকা আদায়ের বিষয়টি কারা ধামাচাপা দিয়েছে? ড. ইউনূসের টাকা যদি ‘রক্তচোষা’ হয়, শেয়ারবাজার আর ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে নেওয়া অপরিশোধিত টাকা কি মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, বেকার যুবকদের মায়ের অলংকার বেচা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরেদের হাড়ের মজ্জা খাওয়া টাকা নয়? তারা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে? অন্য অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর পদবি ছাড়ছেন না। এই বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, কোনো মন্তব্য করলাম না।
প্রতিবেদনের শেষ প্রান্তে বিদেশে ড. ইউনূসের সম্মান, মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিয়ে ছোট্ট একটি কাহিনি বলছি। আমার নাতি রুবায়েৎ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর গবেষণা করছে, বোনের বিয়েতে ঢাকায় এসেছিল। তার সহপাঠীরা হই হই করে বলল, ‘ঢাকা যাচ্ছ, ইউ মাস্ট ব্রিং এ ফটো উইথ অটোগ্রাফ অব ইউনূস (ড. ইউনূসের একটি ছবি অবশ্যই আমার জন্য নিয়ে আসবে)। স্টাডি-গাইড বললেন, ‘ড. ইউনূসের কয়েকটি বই আর ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে আসবে।’ ঢাকায় ইউনূসের সঙ্গে আমার নাতির দুই ঘণ্টার সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করলাম। মেরিল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পর আমাকে একদিন টেলিফোনে জানাল, সেই সাক্ষাৎকার এবং ড. ইউনূসের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের ভিত্তিতে একটি পরিপত্র বা থিসিসের জন্য সে একটি ‘গ্রেড’ বেশি পেয়েছে।
যাক, ড. ইউনূসের স্বদেশে হেনস্তা আর বিদেশে বন্দনা নিয়ে যাঁরা অধিকতর জানতে চান, ওয়েবসাইট আর পত্রপত্রিকায় পড়ে বুঝবেন, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে। তবে কোনো বিদেশি সাংবাদিক, রাষ্ট্রনায়ক ও বুদ্ধিজীবী যদি প্রশ্ন করেছেন, ‘ইউনূস-হেনস্তার রহস্য কী?’ তাঁদের বলেছি, ‘জানি, এখন বলব না, হয়তো ভবিষ্যতে কোনো দিন বলব।’
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.