যাত্রা শুভ হোক

সারা দেশে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। প্রায় আট লাখ শিক্ষার্থী এবার এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বিশাল আশা নিয়ে যেসব পরীক্ষার্থী মেধা যাচাইয়ের এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে তাদের শতভাগ যে পাস করবে না, তা স্বাভাবিক। কিংবা ফরম পূরণই করতে পারেনি।


কিন্তু পরীক্ষার আগেই যদি এভাবে বড় একটি অংশ ঝরে যায়, তা হবে নিশ্চিতভাবে দুর্ভাগ্যজনক। এই দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা প্রতিবছরই হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীদের। গত বছর এই ঝরে পড়ার হার ছিল ১৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এবারও ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা কি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, নাকি অন্য কোনো কারণ সেখানে কাজ করছে।
দেশের সামগ্রিক শিক্ষা উন্নয়ন করতে হলে এই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যখন অকৃতকার্যদের সংখ্যা যোগ হবে তখন দেখা যাবে যে অর্ধেক পরীক্ষার্থীই সাফল্য লাভে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতার জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দায়ী। বলতে দ্বিধা নেই, এই ব্যর্থতা আমাদের জাতীয় অপচয় হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু ঝরে পড়া বন্ধ করতে সরকারি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। কয়েক বছর ধরে পরীক্ষায় পাসের হার সন্তোষজনক হওয়ার কারণে আশা করা হয়েছিল হয়তোবা ঝরে পড়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমতে থাকবে।
গত বছরও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের হার আশানুরূপ কমেছে। যে কারণে পরীক্ষা থেকে শাস্তিমূলক বহিষ্কার কিংবা সাময়িকভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে কাউকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার উদাহরণও ছিল সামান্য। সন্দেহাতীতভাবে পরীক্ষায় এ দিকটি উল্লেখ করার মতো। আশা করা যায় এবারও পরীক্ষার্থীরা নতুন ধারা অব্যাহত রাখবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুমোদিত হওয়ার পর এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ এই প্রথম। যদিও শিক্ষানীতির আলোকে এখনো পরিপূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ পুরনো পদ্ধতিতে লেখাপড়া করে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে এবং একইভাবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবোধক থেকে যাবে। কারণ যারা কৃতকার্য হবে তাদের প্রায় সবাই উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। তাদের মধ্যে খুবই কমসংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। শেষোক্তদের বাদ দিলে বাকি সবাইকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমনই যাতে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও একজন শিক্ষিত লোককে বেকার জীবন চালাতে হয়। নতুবা তাকে এমন জায়গায় চাকরি নিতে হয় যে বিষয়ে নাকি তার কোনো লেখাপড়াই নেই। আশা করা যায়, নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। একই কথা বলা যায় মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণদের ব্যাপারেও। সেখানে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যদি সংস্কার করা সম্ভব হয়, তাহলে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে বেকার জীবন কাটাতে হবে না।

No comments

Powered by Blogger.