শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব কার?-আগুনে পুড়ে ছাই শ্রমিকের জীবন

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামপুর শিল্প এলাকার একটি ডায়িং কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে আট শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা না রেখে অনিরাপদ আবাসস্থলে বসবাসই তাঁদের এই করুণ মৃত্যুর কারণ বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে আগুনে পুড়ে শ্রমিকের মৃত্যুর মিছিল শুধুই দীর্ঘায়িত হচ্ছে।


গত বছর নিমতলী দুর্ঘটনাসহ রাজধানীতে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এভাবেই দগ্ধ হয়েছেন বহু শ্রমিক। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর জন্য শুধু শোক প্রকাশই যথেষ্ট নয়, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তায়ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
কিছুদিন পর পর একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে তাকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন। এভাবে শ্রমিকের মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি চলতে দেওয়া যায় না। এর দায় সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিক বা সরকার এড়াতে পারে না।
শ্রমিকের করুণ মৃত্যুই বলে দেয়, তাঁদের জীবন কতটা নিরাপত্তাহীন। প্রতিরোধ-সম্ভব দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে স্পষ্ট, প্রতিটি মানুষের জীবন যে মূল্যবান—এই বোধ আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে এখনো গড়ে ওঠেনি। যে কজন তরুণ শ্রমিকের মৃত্যু হলো, তাঁদের আয়ের ওপরই পুরো পরিবার নির্ভর করত। শুধু তা-ই নয়, পারস্পরিক প্রীতি ও মমতার বন্ধন ছিল, ছিল নির্ভরতা। প্রতিটি শ্রমিক একক ও স্বতন্ত্র মানবসত্তা হিসেবে বিবেচিত না হয়ে কেবল একেকটা উৎপাদনের হাতিয়ারে পরিণত হলে শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
কোনো মানুষের জীবন বিপন্ন করে উন্নত ও মানবিক সমাজ তৈরি করা যায় না। তাই শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ও সমৃদ্ধির দিকে সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলে চলবে না, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তার ওপরও সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কেন শ্রমিকেরা মানবেতর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকতে বাধ্য হয়, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। ন্যূনতম মর্যাদাপূর্ণ মজুরি পেলে তারা এভাবে মৃত্যুর সঙ্গে রাত্রিবাস করত না। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও মানবিক বিপর্যয় বন্ধ হোক, যাতে প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ বেঁচে থাকার মতো আশ্রয় ও অবলম্বন পায়, সরকার ও কারখানার মালিককে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.