খুনের দায় তাহলে কে নেবে?-রাষ্ট্রপতির ক্ষমা

এবার আরেক সাজাপ্রাপ্ত খুনের আসামির দণ্ড মওকুফ তথা ক্ষমা করে দিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেই আসামি নয় বছর পলাতক থেকে সাজা এড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আসামি আহসান হাবীব টিটু আদালতে হাজির হয়ে আপিল করলে তাঁর দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়।


কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করে তাঁর যাবজ্জীবনের দণ্ডও মওকুফ হলো। তিনি সসম্মানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন। এখন আর তাঁর কোনো অপরাধ নেই, তাই শাস্তিও নেই। কিন্তু যিনি নিহত হয়েছিলেন, যাঁরা স্বজন হারিয়েছিলেন, আইনের কাছে তাঁরা কী বিচার পেলেন? হত্যার শিকার যিনি, শোকের শিকার যাঁরা, তাঁরা কী পেলেন? সাজাপ্রাপ্ত খুনের আসামি যদি ছাড়াই পাবেন, তাহলে খুনের দায় কে নেবে?
এর আগে নাটোরে বিএনপির নেতা গামা হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিদেরও রাষ্ট্রপতি তাঁর মহানুভবতাবলে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এবার জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক হত্যা মামলার প্রধান আসামির প্রতিও তিনি মহানুভব হলেন। বিএনপির একটি মিছিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়ে তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন। অন্য কাউকে কিছু না বলার বিষয়টিও রহস্যাবৃত। এই মামলাটিকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলা যায় না। নিহত ব্যক্তির ভাই প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু আমার ভাইকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা দেওয়ানগঞ্জবাসী ভুলতে পারেনি। এ ধরনের অপরাধ ক্ষমার যোগ্য নয়।’ আমরাও মনে করি, এ ধরনের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য, হোক অপরাধী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সরকারি দলসংশ্লিষ্ট।
এর আগে বিএনপি সরকারের আমলেও বিদেশ থেকে এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ঝিন্টুকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি মওকুফ করে দেওয়া হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়ই বেশি। কেননা তাদের সুপারিশেই রাষ্ট্রপতি আসামির দণ্ড মওকুফ করে দেন। রাজ্জাক হত্যা মামলার আসামির দণ্ড মওকুফের সুপারিশ তাঁরা কিসের ভিত্তিতে করলেন? অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষমার ঘটনায় ভূলুণ্ঠিত হয় আইনের শাসন, ফরিয়াদির ইনসাফ পাওয়ার অধিকার আর ন্যায়বিচারের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। ক্ষমা তখনই মহৎ, যখন তা মহৎ কারণে করা হয় এবং তা পায় অবস্থার শিকার কোনো ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে কী এমন কারণের জন্ম হয়েছিল, তা বলা যাবে না।
এসব ঘটনা অপরাধীদের কী সংকেত দিচ্ছে? তাঁরা ভাববেন, জঘন্য অপরাধ করলেও দলীয় খুঁটির জোরে দণ্ড মওকুফ হয়ে যাবে। অন্যদিকে এ ঘটনায় বিচারপ্রার্থীদের মনে কি অনাস্থা জাগাবে না? এই মওকুফের মহড়া আইনের শাসনের সহায়ক নয় মোটেই। মানুষের মনে যতক্ষণ বিচারের আশা থাকে, যতক্ষণ সরকারকে শেষ আশ্রয় মনে হয়; ততক্ষণই আইনের শাসন ও গণতন্ত্র জীবন্ত থাকে। এ ধরনের বাছবিচারহীন ক্ষমায় অপরাধী বেঁচে যায়, আর বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কেঁদে বেড়ায়।

No comments

Powered by Blogger.