শেখ হাসিনা-এরদোগান শীর্ষ বৈঠক-আন্তর্জাতিক ফোরামে একযোগে কাজ করবে ঢাকা-আঙ্কারা

বাংলাদেশ ও তুরস্ক দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শীর্ষ বৈঠক ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন এবং একে অন্যকে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থনের আশ্বাস দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একে অন্যের প্রার্থিতার প্রতি সমর্থনদানেও একমত হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তুরস্ক শিগগিরই আন্তর্জাতিক পাট গবেষণা গ্রুপে (আইজেএসজি) যোগ দেবে। তুরস্ক বাংলাদেশে বেশ কয়েক শ কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক নির্মাণে অর্থের জোগান দেবে।
বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক ২০১৫ সাল নাগাদ অন্তত ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে। তিনি বলেন, উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে এ মাসেই ইস্তাম্বুলে একটি কনসুলেট জেনারেল প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো এবং চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় ঐতিহাসিক শাহি জামে মসজিদ সংস্কারে সহযোগিতার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে।
শেখ হাসিনা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সুবিধা কাজে লাগানোর পথ প্রশস্ত হবে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি খাত, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগে তাঁর সরকারের আগ্রহের কথা জানান।
বৈঠক শেষে শেখ হাসিনা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এক রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় যোগ দেন।
জনগণের ক্ষমতায়ন দেশকে এগিয়ে নিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জনগণের ক্ষমতায়নের’ ওপর বক্তৃতা করেন। এ সময় তিনি বলেন, সমৃদ্ধ জনগণ দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণ বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন শান্তি ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত শক্তিশালী গণতন্ত্রের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর কেমাল তালুগ বক্তৃতা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে বর্তমানে প্রায় ৪০টি বৃত্তিমূলক ও ১১৪টি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং ১১০টি গ্র্যাজুয়েট কোর্সে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শত শত বছর ধরে বিদ্যমান বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে তুর্কি ভাইদের সাহায্যে বাংলার নারীরা তাঁদের অলংকার দান করেছিলেন। ওই সময় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তুর্কি জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামের ওপর বেশ কয়েকটি কালজয়ী কবিতা ও সংগীত রচনা করেন।’
কসোভোকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে ঢাকা: একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কসোভোকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কসোভোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগিরই আপনারা সুখবর শুনতে পাবেন।’
এফটিএ ও চট্টগ্রাম-ইস্তাম্বুল ফ্লাইট চালুতে সম্মত: বাংলাদেশ ও তুরস্ক সরকার দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণে একটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদন এবং চট্টগ্রাম-ইস্তাম্বুল ফ্লাইট সার্ভিস চালুর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। শেখ হাসিনা গতকাল আঙ্কারায় শেরাটন হোটেলে তুরস্কের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা তুসকনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে এ কথা বলেন। তিনি উভয় দেশের স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি বিশ্বমানের পণ্য আমদানি করার জন্য তুরস্কের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.