ভাঙতে হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন

অবশেষে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর বেগুনবাড়ী খালের ওপর নির্মিত বিজিএমইএর ১৫ তলা ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে ভবনের সব কিছু সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহারকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


এরপর ভাঙার কাজ বিজিএমইএকে নিজ অর্থে করতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজিএমইএ তা না করলে রাজউককে ভবনটি ভাঙার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। রায়ে বিজিএমইএকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে বিজিএমইএর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও জলাধার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর এই ভবনটি বহুল আলোচিত। বিশেষ করে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে র‌্যাংগস ভবন ভাঙার পর অবৈধ এই ভবনটি চলে আসে আলোচনায়। এই জমির কোনো নিবন্ধন ছিল না। ছিল না ভবন নির্মাণের অনুমোদন। ভবন নির্মাণের সময় মানা হয়নি নগর উন্নয়ন আইন-১৯৫৩। উপেক্ষা করা হয়েছে জলাধার সংরক্ষণ আইন। এমনকি এই ভবনের নকশাও রাজউকে অনুমোদিত নয়। এ জন্য বিজিএমইএ ২০০৫ সালে রাজউকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা জরিমানা জমা দেয়। কিন্তু এর পরও দুই সরকারের আমলে দুই প্রধানমন্ত্রীর একজনকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানো হয়েছে, অন্যজনকে দিয়ে ভবন উদ্বোধন করানো হয়েছে। প্রথমে ১৯৯৮ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালে এই ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একটি নকশাবহির্ভূত জমিতে এই বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ভবন উদ্বোধনের সময় সরকারপ্রধানদের আনা হয়েছে। এর ভেতর দিয়েও দুটি উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। একদিকে রাজনীতিকে ব্যবহার করা হয় অবৈধ একটি কাজকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে বিব্রত করা হয়। সেই কাজটিই বিজিএমইএ করেছে বলে মনে করা যেতে পারে।
যে জমিতে বিজিএমইএর ভবনটি নির্মিত হয়েছে, এই জমির মূল মালিক বিজিএমইএ নয়। মূল জমির মালিক রেলওয়ে। দীর্ঘদিন রেলওয়ের ছিল জমিটি। পরে রেলওয়ের কাছ থেকে জমিটি দেওয়া হয় ইপিবিকে। ইপিবি এই জমিটি বিক্রি করে বিজিএমইএর কাছে। আদালতের রায়ে বলা হয়, জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য সরকার জমিটি অধিগ্রহণ করে। এটা সরকারের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু আইন অনুযায়ী সরকার সেটা জাতীয় বা জনস্বার্থে ব্যবহার না করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারে না। সরকার জমি ব্যবহার না করলে বা অধিগ্রহণের উদ্দেশ্য পূরণ না হলে তা জমির মূল মালিককে ফেরত দিতে হবে। এটাই সাংবিধানিক আইন।
বিজিএমইএ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো অপরাধ করা হয়েছে। একদিকে এই ভবনের কোনো অনুমোদিত নকশা নেই। অন্যদিকে মানা হয়নি জলাধার সংরক্ষণ আইন। কাজেই আমরা আশা করব বিজিএমইএ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। একইসঙ্গে আরেকটি দিকে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। রাজধানী ঢাকায় একসময় অনেক খাল ছিল। অনেক খালই চলে গেছে অবৈধ দখলে। কেমন করে এসব খাল অবৈধ দখলে গেল, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এ দখলদারদেরও আনতে হবে আইনের আওতায়।

No comments

Powered by Blogger.