ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) স্মরণে হিজরি সনের রবিউস সানির ১১ তারিখে যে ফাতেহা বা মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, তারই নাম ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম। এ অনুষ্ঠানের প্রচলন ইরান, মধ্য এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশেই বেশি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউস সানি তিনি ইন্তেকাল করেন।


ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকেই এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।
হজরত বড়পীর (রহ.) ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাতেন এবং চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও আদর্শিক মনোবৃত্তি গঠনে কাজ করতেন। সবচেয়ে বড় অলৌকিকত্ব হলো তার মুখনিঃসৃত কথাবার্তা। এসব কথাবার্তা ও বাণীর মধ্যে এমন আকর্ষণ ছিল যে, শ্রোতাদের মনে তা গভীর দাগ কাটত। তার কথায় অনেক কঠিন হৃদয়ের মানুষ ভ্রান্ত ধর্মাবলম্বী ও পাপী-তাপী লোক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। ছোট্ট বয়সে বড়পীরের চারিত্রিক মাধুর্য ও সত্যবাদিতার বিরল দৃশ্য দেখে এক ডাকাত সর্দার দলবলসহ ইসলাম গ্রহণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল_ তা পাঠকমাত্রই অবগত আছেন।
হজরত বড়পীর (রহ.) প্রায়ই বলতেন, 'আমার ইচ্ছা হয় নির্জনে বসে ইবাদতে দিন কাটাই, কিন্তু আল্লাহতায়ালা চান আমার কাছে জনসেবা। তাই মানুষের বেষ্টনীর মধ্যেই আমি বসবাস করি। এতে লোকদের সত্যের পথ চিনাতে সহজ হয়...।'
ইতিহাস সাক্ষী_ হজরত বড়পীর (রহ.) কখনও কোনো রাজা-বাদশার তোয়াক্কা করতেন না। বরং অন্যায় কাজের জন্য খলিফার সমালোচনা করতেও তিনি দ্ব্যর্থহীন ছিলেন। তিনি দরবারি আলেম ও সরকারি আলেমদেরও মনেপ্রাণে ঘৃণা করতেন এবং সবাইকে এসব তোষামোদী নীতি পরিহার করে দ্বীনি আদর্শ পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে থাকার পরামর্শ দিতেন। তবুও সমকালীন শাসক মনীষীরা তার দরবারে এসে ভিড় জমাতেন। এ সবকিছু তিনি পারতেন এ কারণে যে, তিনি সুখ-দুঃখ, কল্যাণ-অকল্যাণ এবং ভালো-মন্দ সবকিছুর একমাত্র শক্তি হিসেবে আল্লাহতয়ালাকে জানতেন। তাই তার মনে কোনো মনুষ্যভীতি ছিল না; ছিল খোদাভীতি।
হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) ৪৭০ হিজরিতে ইরানের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগদাদের মহান ব্যক্তিত্ব হজরত আবু সাঈদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাখরুমির (রহ.) কাছ থেকে মারিফাতের জ্ঞানে পূর্ণতা লাভ করেন এবং খেলাফতপ্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন জাহেরি-বাতেনি উভয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ। ইন্তেকালের পূর্বক্ষণে তাঁর উপদেশ ছিল, 'একমাত্র আল্লাহকে ভয় করা এবং তার ইবাদত-বন্দেগি করা তোমার (তোমাদের) কর্তব্য। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করো না এবং কারও কাছে কোনো কিছু আশা করো না। আল্লাহ ছাড়া আর কারও প্রতি ভরসাও করো না। তাওহিদ বা একত্ববাদ ছাড়া অন্য কোনো বস্তুর প্রতি নির্ভর করো না, যে তাওহিদ সম্পর্কে পূর্বপুরুষরা সবাই একমত।'
হজরত বড়পীর (রহ.) তার অগণিত ছাত্র, ভক্ত ও পরিবারের সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ৫৬১ হিজরি সনের ১১ রবিউস সানি, ৯১ বছর বয়সে জান্নাতবাসী হন। সারাবিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান আজও আলোর পথের এই মহান দিশারীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকে। ইরাকের বাগদাদ নগরে তার কবর অবস্থিত। হজরত বড়পীর (রহ.) অনেক ধর্মীয় কিতাবও রচনা করে গেছেন। তন্মধ্যে গুনয়াতুত তালিবিন, ফতহুল কাদীর, ফতহুল গায়ব ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ কিতাবগুলো মুসলিম সমাজের আলোকবর্তিকা হয়ে আছে। এছাড়া তার অনেক শিষ্য তার মূল্যবান ওয়াজ নসিহতগুলো গ্রন্থবদ্ধ করেন।
muftianaet@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.