সাগরের মোবাইলে এখনও ফোন দেন মা by রিয়াজ রায়হান

‘হ্যালো মা, কেমন আছো? আমি একটু ব্যস্ত আছি। জরুরি কিছু? না হলে পরে ফোন দিই মা?’ এরকম কথা কতদিনই তো গেছে। এখনও সেই নিয়ম করেই ছেলেকে ফোন দেয় মা। কিন্তু আগের মতো ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এখন আর ছেলের কণ্ঠ ভেসে আসে না।

পরিবর্তে শুধু একটি স্বয়ংক্রিয় নারীকণ্ঠ শোনা যায়, ‘দুঃখিত, আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।’ কিন্তু তাতে কি! মার মন বলছে একবার না একবার ছেলে ঠিকই ফোন ধরবে। অথচ এই মায়েরই জানা আছে, ঘাতকের নৃশংসতায় ছেলে তার চলে গেছে চিরদিনের জন্য।

প্রিয়তমা স্ত্রীসহ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির এখনও প্রতিদিনই ছেলের মোবাইল নম্বরে ফোন দেন। নির্মম বাস্তবতাও জানেন, ছেলে আর কোনদিনই ফোন ধরবে না। ‘তবু একবার যদি ছেলে ফোন ধরে!’

ছেলেকে হারিয়েছেন ২৪ দিন আগে। এখনও ছেলের অপেক্ষায় বাসার সামনের কক্ষেই সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন। দরজায় একটু শব্দ হলেই চোখ তুলে তাকিয়ে থাকেন। আর ভাবেন এই বুঝি তার আদরের সাগর এসেছে।

দিনরাত সমান হয়ে গেছে সালেহা মনিরের। ছেলেকে হারানোর পর থেকে শতচেষ্টায়ও চোখে ঘুম আসেনি তার। খাওয়া-দাওয়া বলতে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু ঠিক তার বেশি নয়। তাও মেয়ে, ছেলের বন্ধু আর প্রিয় নাতি মেঘের অনুরোধে।

সারারাত জেগে নামাজ পড়েন আর আল্লাহর কাছে ছেলের হত্যাকারিদের বিচার চান।

পুরান ঢাকার নবাবপুরের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আধা-শোয়া হয়ে দেয়ালে টানানো ছেলে, ছেলের বউ আর নাতির ছবির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।

একটু পরপর বলছেন, ‘সাগর রে... আমার ফোন ধরো না কেন বাবা? মারে ছাড়া এতদিন কেমনে রইলা? আমারে দেখতে কি মন চায় না?’ আরও কত কথা!

শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেলে আর ছেলের বউর কবর দেখতে আজিমপুর কবরস্থানে যাবেন সাগরের মা।

সাগরের মেজো বোন মঞ্জুআরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাবার নিষেধ ছিল নারীদের কবরস্থানে যাওয়া। সেজন্য আমরা বাবার কবরও কোনদিন দেখতে যাইনি। কিন্তু মা-কে কোনভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। সেজন্য শুক্রবার মাকে সাগরের কবর দেখাতে নিয়ে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘মা প্রতিদিনই দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া কিছুই নেই। সব সময় কাঁদেন আর সাগরের অপেক্ষায় থাকেন। তিনি এখনও ভাবেন সাগর কোনো একদিন আবার ফিরে আসবে।’

সাগরের কোনো বন্ধুকে দেখলে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘বাবা তোমরাই আমার সাগর। তোমরা আমার কাছে আস না কেন? সাগর আমাকে এখন আর ডাকে না। ছেলেটা খুব রাগ করেছে।’

No comments

Powered by Blogger.