খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক-সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে

পচনরোধ ও দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য আমদানিকৃত ফল এবং মাছে ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো হয়_ এ তথ্যটি গণমাধ্যমের কল্যাণে সবার জানা। ফরমালিন মেশানো খাদ্যদ্রব্যগুলো যে শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য বিশেষ হুমকি তৈরি করছে, সাধারণের শরীরে ক্যান্সারের মতো ঘাতকব্যাধি ছড়িয়ে দিচ্ছে তাও কারও অবিদিত নয়।


সবার জানাশোনা সত্ত্বেও ক্ষতিকর এ খাদ্যদ্রব্যগুলোর বিকিকিনি চলছে প্রকাশ্যেই। আর লোকে পুষ্টিকর ও উপকারী খাদ্য মনে করে সেগুলো কিনছেনও। রেওয়াজ হলো, রোগীদের দেখতে গেলে শুভার্থীরা আমদানিকৃত নানা ফল নিয়ে যান কিন্তু এ ফলগুলোতেই যে বিষাক্ত উপাদান অধিক পরিমাণে মেশানো হয় সে সচেতনতা কি সর্বসাধারণের মধ্যে আছে? সাধারণের মধ্যে সচেতনতা নেই, আমদানিকারক থেকে দোকানদার পর্যন্ত জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলোও স্রেফ হঠাৎ অভিযানের মধ্যেই নিজেদের কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ রেখেছে। সমকালে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্যে ভেজাল, বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে যে লেখালেখি হয়েছে তা বিফলে গেছে। কোনো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিই এদিকে আকৃষ্ট হয়নি। অথচ খাদ্যে ভেজাল, ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো কঠোর দণ্ডনীয় অপরাধ। জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ বিবেচনা করে এ অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন সাজা এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। কথায় আছে, বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। কঠোর আইন আছে বটে, কিন্তু এ আইন প্রয়োগের কোনো নজির নেই। খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর অপরাধে এ পর্যন্ত যে শাস্তির নজির দেখা গেছে তাতে সামান্য জরিমানাই প্রধান। গুরু অপরাধে লঘু শাস্তির এমন বিধানের কারণে ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও বাজারজাতকারীরাও বিষয়টি নিয়ে সজাগ হচ্ছেন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে দেখা যাচ্ছে, আমদানিকৃত ফলগুলো দেশে আনার আগেই রাসায়নিক মেশানো হয়। ফল সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক মেশানোর রেওয়াজ আছে। কিন্তু সে রাসায়নিক হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। উন্নত দেশগুলোতে ফরমালিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার উঠে গেলেও আমাদের দেশে বাজারজাতকৃত অনেক পণ্যেই এ রাসায়নিকটির অস্তিত্ব মিলেছে। আর ফরমালিনযুক্ত এ ফল ও অন্য খাদ্যদ্রব্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলোর চোখের সামনে দিয়েই বাংলাদেশে আসছে। তারা যেনতেনভাবে পরীক্ষা করে কিংবা কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এগুলোকে নিরাপদ ও বাজারজাত উপযোগী বলে সত্যায়িতও করছেন। এক্ষেত্রে উৎকোচযোগের অভিযোগও উঠছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অবহেলা, ব্যবসায়ীদের লোভ, আইন প্রয়োগের শিথিলতা সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে। আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠছে আরও ভয়াবহ সব আশঙ্কা সঙ্গে করে। আমরা মনে করি, শিথিলতা ও অসচেতনতার এ ধারাটি আর দীর্ঘায়িত হওয়া উচিত নয়। ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে বুধবার আদালত একটি নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চাই, আদালতের এ নির্দেশনাটি কার্যকর হোক। বাজারজাতকৃত ফলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ আসুক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে বিকল্প ব্যবস্থায় ফল সংরক্ষণ করছে তাও এখানে চালু হওয়া দরকার। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে সজাগ হতে হবে। এ বিষয়ে কর্তব্যরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে সর্বাগ্রে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে এর কোনো বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.