কথা রাখতে পারেনি ওয়াসা এবারও পানিতে দুর্গন্ধ by অরূপ দত্ত

এবারের শুকনো মৌসুমে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ থাকবে না বলে কর্তৃপক্ষ গত বছর শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সে কথা সত্য হয়নি। গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে সায়েদাবাদ শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

কোনো কোনো এলাকায় পানিতে রয়েছে ময়লাও। বাড়ির পানির কলে দুর্গন্ধময় ময়লা পানি আসায় নগরের এলাকায় এলাকায় গৃহিণী বা কাজের লোকেরা ওয়াসার পাম্প থেকে পানি সংগ্রহে লাইন দিচ্ছেন। গত বছরের ঘোষণা: ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের ডেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আগামী বছর সায়েদাবাদে দূষিত পানির প্রাক-শোধনব্যবস্থা চালু হবে, সুতরাং আমাদের সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ থাকবে না। এ বছরের জন্য (২০১১) নগরবাসীকে একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে।’
গতকাল বুধবার ওয়াসার এমডিকে বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানিতে দুর্গন্ধ দেখা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। তাকসিম এ খান বলেন, ‘গত বছর বলেছিলাম, আগামী বছর (২০১২) ঢাকার পানিতে দুর্গন্ধ থাকবে না, তা মিথ্যা নয়। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের দ্বিতীয় পর্যায়ের সঙ্গে প্রাক-পরিশোধন যন্ত্র (প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) যুক্ত করার যে কাজ চলছিল, তা শেষ হয়েছে। শিগগিরই এই যন্ত্র চালু করা হবে। এর ফলে পানিতে দুর্গন্ধ আর থাকবে না।’
কোথায় বেশি ময়লা-দুর্গন্ধ: পুরান ঢাকার নিউ পল্টনে নতুন কবরস্থান এলাকায় রয়েছে ‘আজিমপুর শিশুপার্ক পানির পাম্প’। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা গেল পানি সংগ্রহে ব্যস্ত এলাকাবাসী।
কর্তব্যরত ওয়াসার কর্মী আখতার হোসেনও স্বীকার করলেন, এলাকায় প্রায় এক মাস ধরে পানিতে দুর্গন্ধ। সারা দিন এমনকি রাত ১২টার সময়ও এখান থেকে পানি নিতে লোকজন আসে বলে জানান তিনি।
২১/৩ নিউ পল্টনের বাসিন্দা ফারজানা আক্তার ক্ষোভের সঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, বাসায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে এত বেশি ময়লা আর দুর্গন্ধ যে, ফুটিয়েও লাভ হয় না। কাজের লোক নেই, বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই বেরিয়ে এসেছেন।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আবদুল আলিম বলেন, অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তিনি পানি না নিয়ে গেলে রান্না হবে না।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পূর্বদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি পানির পাম্প হাউস রয়েছে। মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষকে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। এখানে শান্তিনগর চামেলীবাগের বাসিন্দা আবদুর রহিম ও তাঁর স্ত্রী বড় বড় জারভর্তি পানি রিকশায় তুলছিলেন। রহিম বললেন, বাড়িওয়ালাকে পানির বিল হিসেবে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেন। কিন্তু প্রায় ২০ দিন ধরে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ।
টিকাটুলী অভয় দাস লেনেও ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। এলাকার বাসিন্দা আরতি নন্দী অভিযোগ করেন, দুর্গন্ধের কারণে পানি কিনে পান করছেন।
ঢাকার পূর্বাঞ্চলেও বিভিন্ন স্থানে ওয়াসার পানি ময়লা ও দুর্গন্ধময়। খিলগাঁও প্রভাতীবাগের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পানি রীতিমতো ঘোলা। ফুটিয়ে পান করতেও প্রবৃত্তি হয় না। ময়লা আর দুর্গন্ধের অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদারটেক ও মানিকনগর এলাকা থেকেও।

No comments

Powered by Blogger.