আর কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান নয়-স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান

দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান ও গ্যাস পাওয়া মানে আবিষ্কৃত গ্যাসের পুরো মালিকানাই দেশের। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) সম্প্রতি নোয়াখালীর সুন্দলপুরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাস পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই গ্যাসের পুরো মালিকানা বাংলাদেশের।


বাপেক্সের এই সাফল্য আমাদের উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করেছে। বাপেক্সকে দিয়ে যদি গ্যাস অনুসন্ধান এবং এ ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যায়, তবে বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়ে কেন প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আমরা আমাদের শতভাগ মালিকানার বিষয়টি হারাব, সেই প্রশ্ন আবার নতুন করে উঠে এসেছে।
বাপেক্সের এই সাফল্যে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে কমিটি বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা এবং দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ তাদের মাধ্যমে করানোর সুপারিশ করেছে। আমরা কমিটির এই সিদ্ধান্তকে শুভবুদ্ধির পরিচয় বলে মনে করছি। বাপেক্স বা দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, একদিকে পুরো প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা পাওয়া, অন্যদিকে কম খরচে গ্যাস উত্তোলন করা। বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানির যেখানে প্রতি ইউনিট গ্যাসের উৎপাদন খরচ তিন মার্কিন ডলার বা ২১০ টাকার বেশি, সেখানে বাপেক্সের উৎপাদন খরচ প্রায় মাত্র ২৫ টাকা। আমরা মনে করি, স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো বিদেশি কোম্পানি নয়—এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বাপেক্স নিজেদের দক্ষতা ও সাফল্যের পরিচয় রেখেছে। এখন দেশের স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধানের সব দায়িত্ব বাপেক্সকে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করা আবশ্যক। আর্থিক, কারিগরি ও লোকবল—সব ক্ষেত্রেই। আমরা এ ব্যাপারে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে চাই।
বাপেক্স ছাড়াও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফসিএল) গ্যাস আহরণের সঙ্গে জড়িত। প্রথমত, আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে এক করে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। তা করা গেলে কারিগরি ও জনবলের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ও শক্তি অনেক বাড়বে। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তেল-গ্যাস উত্তোলনের খরচের বাইরে যৌক্তিক পর্যায়ের মুনাফার সুযোগ করে দিতে হবে। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে এই যৌক্তিক মুনাফার বিষয়টি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।
আমরা আশা করব, সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকার স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব আর কোনো বিদেশি কোম্পানিকে না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি বাপেক্সকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে। দেশের সংকটময় গ্যাস-পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগগুলো দ্রুতই নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.