চিকিৎসকের পদ শূন্য-সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের অন্তরায়

চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু দুঃখজক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত সবার জন্য চিকিৎসাসেবা ও প্রাপ্তির বিষয়টি সহজলভ্য করা যায়নি। সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিশেষ করে মফস্বলের চিত্র এখনো নাজুক। মহাজোট সরকার এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল এখনো সর্বব্যাপী যথেষ্ট নয়।


চিকিৎসকদের শূন্যপদের পাশাপাশি জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে চিকিৎসকদের অনীহা এখনো প্রকট। বেশির ভাগই নিয়োগ বা বদলি নিয়ে সেসব কেন্দ্রে গেলেও আবার ডেপুটেশনে চলে আসেন। এমন নজির আছে অনেক। এ সব কিছুই সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে।
৪ মার্চ সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশ, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আট সহস্রাধিক চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে নিয়োগ নিয়ে ক্যাডার-ননক্যাডার জটিলতা, যা আজ তিন বছর ধরে ঝুলে আছে। অথচ চিকিৎসকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোর চিত্র নতুন করে বলার কিছু নেই। সেখানে বছরের পর বছর চলছে চিকিৎসক সংকট। এমন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আছে, যেখানে কোনো চিকিৎসকই নেই! আবার যেখানে থাকার কথা তিন থেকে চারজন, সেখানে আছেন একজন। তা ছাড়া সরকারি দায়িত্ব পেলে নিজেরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত, এমন চিত্রও যথেষ্ট স্পষ্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলরাও এসব বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করেননি। সরকার যেখানে সবার জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার বারবার ব্যক্ত করে আসছে, সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতি অনেক প্রশ্নই দাঁড় করায়। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে রয়েছে নানা রকম সংকটও। ওষুধ নেই, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল ইত্যাদি অনেক কিছুই নেই আর নেই। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশের চিকিৎসাচিত্র অনেকটাই পাল্টে গেলেও যে সেবার দাম এত বেশি, যা বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। চিকিৎসকরাও সেসব চিকিৎসা কেন্দ্রেই ঝুঁকছেন নিজেদের আর্থিক লাভালাভের কারণে। ফলে দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর বিড়ম্বনা ক্রমেই পৌঁছে যাচ্ছে সীমাহীন পর্যায়ে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদ্যমান চিত্র দূর করতে হবে বৃহৎ জনস্বার্থের বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রধান্য দিয়ে। শূন্যপদ পূরণের পাশাপাশি যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে, তিনি সেখানেই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্ঠ থাকবেন তাও নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা যাতে নিরুপদ্রবে কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে জন্য বাসস্থানসহ অন্য বিষয়গুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিশেষ নজর দিতে হবে। ক্যাডার-ননক্যাডার জটিলতা অবসানের লক্ষ্যে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এর একটি বিবর্তনহীন সমাধান সূত্র বের করতে হবে। এত দিন ধরে যেভাবে বিষয়টি ঝুলে আছে, তা বিস্ময়কর, যুগপৎ প্রশ্নবোধক। সর্বসাধারণের নাগালের মধ্যে চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসার দায় অবশ্যই সরকারের।

No comments

Powered by Blogger.