পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-সেবার মান কি প্রশ্নবিদ্ধই থাকবে?

যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জন্ম দেওয়া হয়েছিল, তা যেন ভেস্তে যাচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সহযোগী একটি দৈনিকে এ-সম্পর্কিত যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের হ-য-ব-র-ল চিত্রই ফুটে উঠেছে। একদিকে দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থা, অন্যদিকে অদূরদর্শী পরিকল্পনার খেসারত দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।


পুরনো প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি এবং সঞ্চালন ব্যবস্থার নানা ত্রুটির কারণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বর্তমান-ভবিষ্যৎ সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি করার পরিকল্পনা না নিয়ে গ্রাহক ও বিতরণ লাইন সম্প্রসারণের যে সিদ্ধান্ত সংস্থাটি নিয়েছে, তা বিস্ময়কর। ফলে সেবার মান আরো নিচে নেমে যাওয়ার শঙ্কাই প্রকট। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সব কিছু যুগোপযোগী করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকসেবা প্রদান আদৌ সম্ভব নয়। বর্তমানে সংস্থাটি ২৪০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। দেশের সিংহভাগ এলাকায় কৃষি সেচ ব্যবস্থা পল্লী বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। সেচ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়ে তারা গ্রাহকদের বঞ্চিত করছে। এ যেন একদিকে না তাকিয়ে অন্যদিক আলোকিত করার প্রয়াস। এটি তো একটি সেবামূলক সংস্থার নীতি হতে পারে না। তা ছাড়া উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বিদ্যুতের অভাবে সেচ কাজ ব্যাহত হওয়ার খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় ঘেরাও করেছে- এ খবরও মিলেছে। তাদের সাবস্টেশনগুলো অনেক পুরনো। ত্রুটিযুক্ত সাবস্টেশন এবং সঞ্চালন লাইনের কারণে ওভারলোডজনিত সমস্যাও দেখা দিয়েছে। সব কিছুরই শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা। এর মধ্যে নতুন করে গ্রাহক ও বিতরণ লাইন বাড়ানোর পরিকল্পনা অদূরদর্শিতা ও অপরিকল্পনারই সাক্ষ্যবহ। সরকার ইতিমধ্যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে আরো শক্তিশালী করে গ্রাহকের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি সংস্থাটির সব কার্যক্রম যুগোপযোগী করা অত্যন্ত জরুরি। মফস্বলের মানুষ পল্লী বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। তারা আর কত দিন অধিকার ও সেবা বঞ্চিত থাকবে- এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট মহলের। সেচের ভর মৌসুম চলছে। কিন্তু সেচকাজে বিঘ্ন ঘটছে বিদ্যুতের কারণে। সেচকাজে বিঘ্ন ঘটলে উৎপাদন ব্যবস্থায় এর বিরূপ ধাক্কা লাগবে এবং এর ফলে জাতীয় অর্থনীতিও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাম্বা আছে বিদ্যুৎ নেই, এমন দৃশ্য মানুষকে সংগতই আরো ক্ষুব্ধ করবে। তাই সর্বাগ্রে পল্লী বিদ্যুতের জরাজীর্ণ অবস্থা কাটানো জরুরি। তা না করে সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ ও গ্রাহক বাড়ানোর পরিকল্পনা সঠিক নয় বলেই আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.