জবরদস্তির রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিহার করুন-মানববন্ধনে হামলা কেন?

গত শুক্রবার টাঙ্গাইলের সখীপুরে সখীপুর-গোড়াই সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের দাবিতে বিএনপি মানববন্ধন করতে গেলে প্রথমে পুলিশ বাধা দেয়, তারপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালান।


বিএনপির আক্রান্ত নেতা-কর্মীরা একপর্যায়ে নিজেদের কার্যালয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চলে। হামলায় সখীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সহসভাপতিসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের ২৩ জন নেতা-কর্মী আহত হন। আঘাত পেয়েছেন তিন সংবাদকর্মীও।
সড়ক সংস্কারের দাবি কোনো অন্যায্য দাবি নয়। মানববন্ধনও নয় কোনো সহিংস বা জবরদস্তিমূলক কর্মসূচি। তাহলে পুলিশ কেন সেই মানববন্ধনে বাধা দিতে গেল, আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের পেশাদার ‘ছাত্র’ ও ‘যুবকেরা’ কেনই বা হামলা চালালেন, আহত করলেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ২৩ নেতা-কর্মীকে? আমরা জানি, এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর ছাত্রলীগ-যুবলীগের পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সংবাদ সম্মেলন করে বলে দিয়েছে, বিএনপির মানববন্ধনে তারা হামলা করেনি। আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপির হামলাতেই নাকি তাঁর দলের ১৪ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো স্পষ্টই বলে দিচ্ছে, কারা হামলা করেছে, আর কারা হামলার শিকার হয়েছে। ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর আক্রমণ চালিয়ে যে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না, এই সত্য নিশ্চয় ভুলে গেছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও তাদের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগের নেতারা। পুলিশ অপরাধ দমন করতে পারে না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে না; কিন্তু বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিতে ও নেতা-কর্মীদের পেটাতে অতি পারঙ্গম।
একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে, অন্যদিকে দলীয় পান্ডাদের দিয়ে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যেভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে গণতান্ত্রিক মানসিকতার নামগন্ধ নেই; বরং আছে এমন এক স্বৈরতান্ত্রিক ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব, যা কোনো দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্যই ভালো হতে পারে না। জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে যে দল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি তার এমন অগণতান্ত্রিক ও জবরদস্তিমূলক আচরণ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.