বিদ্যালয়-শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি নয়

দে শের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকের শারীরিক শাস্তির শিকার হয়। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আর্থিক সহায়তায় আইআইডি পরিচালিত এ সম্পর্কিত জরিপে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, হাইকোর্ট শিক্ষার্থী নির্যাতন নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করার এক বছর পরও এ ক্ষেত্রে তেমন

উন্নতি হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হরহামেশাই শিক্ষকদের মৌখিক ভর্ৎসনাসহ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা ওঠবস করা, চিমটি খাওয়া, চুল টানা, বেতের আঘাত বা হাঁটু গেড়ে বসার মতো শাস্তি পেয়ে থাকে। শিক্ষক, এমনকি অনেক অভিভাবকও এ ধরনের শাস্তি শিক্ষার্থীকে নিয়মনীতি মানতে বাধ্য করার মোক্ষম দাওয়াই বলে মনে করেন। এ ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই এ ধরনের শাস্তি অধোবদনে মনে নিতে বাধ্য হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণ লোপ পাওয়া, সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়া বা তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা জন্ম নেওয়ার মতো সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার গুণাবলি হ্রাস পায়। তাছাড়া কোনো কোনো শিক্ষার্থী সতীর্থদের সামনে এ ধরনের শাস্তির কারণে সৃষ্ট মর্মবেদনায় অত্যধিক কাতর হয়ে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিয়েছে_ এমন উদাহরণ হাল আমলেই পাওয়া যাবে। উচ্চ আদালতের আদেশে শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা গর্হিত অন্যায় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ রায় সম্পর্কে অধিকাংশ শিক্ষক অবগত থাকার পরও কীভাবে এ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে_ সেটিই চরম বিস্ময়ের!
শিক্ষক ও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীকে নিয়মনীতি সম্পর্কে অবহিত করবেন, কীভাবে ভালো ছাত্র হওয়া যায় সে সম্পর্কে মানসিক নির্যাতনের সমতুল্য নয় তেমন উপদেশ দেবেন এবং সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জনের পথের সন্ধান দেবেন_ এটিই তো স্বাভাবিক। কিন্তু শিক্ষার্থীকে এ জন্য শারীরিক শাস্তি প্রদান কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কোর্স করানো উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি প্রদানের মতো গর্হিত কাজ থেকে শিক্ষকদের বিরত রাখার প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলনও ইতিবাচক ফল দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.