কপাল বটে by আনোয়ার হোসেন

সোনার আঁচে ঝলসাচ্ছে ব্যবসা এবং মধ্যবিত্তের স্বপ্ন_ এমন শিরোনাম দিয়েছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। শনিবার তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে এক মধ্যবিত্তের আক্ষেপ : 'একমাত্র মেয়ের বিয়েতে ১০-১২ ভরির মতো গহনা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দামের কারণে সাত-আট ভরির বেশি দিতে পারছি না।'

মাত্র মাস ছয়েকের মধ্যে ভারতের বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম বেড়েছে সাত হাজার টাকার কাছাকাছি। তাই সব মধ্যবিত্ত পরিবারকেই বিয়ের বাজারের গহনা কম কিনতে হচ্ছে।
আর এসবের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে গহনার ব্যবসায়ে। ক্রেতার অভাবে মাছি তাড়াচ্ছে স্বর্ণের দোকানগুলো। এক বিক্রেতা দোকানে ঘুমাচ্ছেন, এমন ছবিও ছেপেছে পত্রিকাটি। কেবল বিয়ের গহনা নয়, উপহারেও গহনার চল কমে গেছে। স্বর্ণের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় উপহার হিসেবে সাধারণ মানুষ এখন অন্য জিনিসের দিকে ঝুঁকেছে। বিশেষ সমস্যায় পড়েছেন স্বল্প মূল্যের গহনা প্রস্তুতকারকরা। তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে।
পত্রিকাটির মতে, স্বর্ণের দাম ক্রমেই আকাশছোঁয়া হওয়ায় আরও একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে_ প্রতিদিন লাফিয়ে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা নতুন দাম ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ক্রেতারা এসে গালমন্দ করছেন। অবস্থা সামাল দিতে বাজারে অনেকে প্রয়োজনের চেয়ে কম স্বর্ণ ব্যবহার করছেন। এতে প্রতারণার মাত্রাও বাড়ছে। পছন্দ শিকেয় উঠছে। কেউ কেউ ব্রোঞ্জের চুড়িতে স্বর্ণের প্রলেপ দিচ্ছেন। কিন্তু দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যায় কি?
বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন কিছু নয়। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির কর্মকর্তারা জানান, ৬ আগস্ট ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৫২ হাজার ৮০ টাকা, ১১ আগস্ট তা বিক্রি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৩০ টাকায়। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম এ সময়ে ৪৯ হাজার ৭৪৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১ হাজার ৪৩৮ টাকা। যারা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য কোটি টাকার বাজেট করেন, তাদের জন্য এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি কোনো সমস্যা নয়। তারা গহনা বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ না হয় ৫-৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু সাধ যাদের সীমাহীন, কিন্তু সাধ্য অতিশয় কম_ সেই মধ্যবিত্তের কী হবে? তারা কিন্তু আদপেই চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। যৌতুকের দাবিতে এখনও যারা অনড়, তাদের অবশ্য সুদিন যাচ্ছে। কেবল একটাই সমস্যা_ যত গহনা, তত ভেজালও আসতে পারে ঘরে। অলঙ্কার বানাতে গেলে প্রতারণার বিষয়টি মনে রাখতেই হয়। কথায় বলে, স্বর্ণকাররা মায়ের কানের দুলেও চুরি করে।
একটি প্রবাদ আপনা আপনি গড়ে ওঠে না, বহু বছরের অভিজ্ঞতায় তা লোকমুখে ছড়াতে থাকে। অলঙ্কারের দাম যখন বাড়তে থাকে তখন ভেজাল বাড়ে। বাংলাদেশের ফলে বিষ, মাছে বিষ। অলঙ্কারে ভেজাল। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল তাই কম খেতে হবে। অলঙ্কার নিয়ে এমন পরামর্শ কেউ দিতে আসেনি। এত বেশি দাম কেন, সেটা নিয়ে সরকারকে কেউ তেমন দায়ীও করে না। কপাল বটে সরকারের। এত সমস্যা চারদিকে এবং সবকিছুর জন্যই ক্ষোভের তীর তাদের প্রতি। কিন্তু সবচেয়ে দামি যে পণ্য তা নিয়ে তেমন দোষারোপ নেই সরকারকে।
 

No comments

Powered by Blogger.