ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় হোক by এসএম নাজমুল হক ইমন

আবারও ঘটল সড়ক দুর্ঘটনা। দুমড়ে-মুচড়ে গেল মাইক্রোবাসটি। প্রাণ গেল ৫ জনের। বাকিরা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যারা যন্ত্রদানবের আঘাতে প্রাণ দিলেন তাদের মধ্যে একজন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জগতে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব আশফাক মুনীর। স্বনামখ্যাত ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে।

যিনি এটিএন নিউজের সিইও এবং প্রধান সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার মানিকগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি অন্যদের সঙ্গে প্রাণ হারালেন। বাংলাদেশের অন্যতম মেধাবী চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদও এক সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন। তিনিও প্রাণ হারান। তারেক মাসুদের সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ছায়াছবি 'মুক্তির গান'। আরও অনেক ভালো ছবি তৈরি করেছেন তিনি। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ আহত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক ঢালী আল মামুন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বেশ কয়েকজন গুণী মানুষ এক সঙ্গে ছবির শুটিং লোকেশন দেখে ঢাকা ফিরছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিণতি এই ৫টি তাজা প্রাণের অকালে ঝরে যাওয়া। রাস্তার প্রশস্ততা আইন মেনে না চলা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালানো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি চালক, যাত্রী সবাইকে সচেতন হতে হবে। নইলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তেই থাকবে।
দেশের মহাসড়কগুলো একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া মিরসরাই ট্র্যাজেডির পর মহাসড়কে যান চলাচলের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে সমাজে। মহাসড়কে যান চলাচলের যে ঝুঁকি তার পেছনের কারণ নানাবিধ। গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে_ ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় দেড় লাখ অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল করছে মহাসড়কে। দ্বিতীয় বড় কারণ, বেশিরভাগ চালকের লাইসেন্সই ভুয়া। অন্যদিকে এই দুই সমস্যা মোকাবেলা করবে যে হাইওয়ে পুলিশ, তাদের রয়েছে নানা দুর্বলতা। হাইওয়ে পুলিশের জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে যানবাহন সংকট। উন্নতমানের প্রশিক্ষণ বলতেও কিছু নেই। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। মাদক ও চোরাকারবারিদের সঙ্গে এ পুলিশের একটি অংশের রয়েছে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। এসব দুর্নীতিগ্রস্ত হাইওয়ে পুলিশ যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করার কোনো তাগিদই অনুভব করে না।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির ব্যাপারে এ সংস্থার ব্যর্থতা সীমাহীন। খোদ রাজধানীতে চলাচল করছে কয়েক হাজার লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন। যানবাহনের ফিটনেস দেখভাল করার একটি বড় প্রতিষ্ঠান থাকার পরও পুলিশের নাকের ডগায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করলেও কারও মধ্যে নেই কোনো বিকার। চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করার জন্যও নেই কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা। অন্যদিকে বিআরটিএর একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে সহজেই লাইসেন্স জোগাড় করা যাচ্ছে। বস্তুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচারের ব্যবস্থা, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, অনুমোদনহীন গাড়ি জব্দ করা, চলন্ত অবস্থায় চালকদের মোবাইল ফোনে কথা বলা বন্ধ করা, হেলপারদের দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করা, রাস্তাঘাটের সংস্কার ইত্যাদি সমস্যা মোকাবেলা করা না গেলে মহাসড়কের দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়।
বগুড়া
 

No comments

Powered by Blogger.