সব প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে-জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় ধরনের তহবিল জোগানোর সম্ভাবনা সামনে রেখে বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের নেতারা যে দুর্নীতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা অমূলক নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেখানে অর্থ সেখানেই দুর্নীতি জেঁকে বসে। শনিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) থেকে সারা বিশ্বে একযোগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যেসব

তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে, তাতে আশার চেয়ে আশঙ্কার দিকটিই বেশি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ‘সুন্দরবন থেকে বছরে ১২৫ কোটি টাকার কাঠ পাচার হয়। অসাধু বন কর্মকর্তারা বাওয়ালিদের কাছ থেকে বছরে সোয়া ছয় কোটি টাকার ঘুষ নিয়ে থাকেন। জেলেদের কাছ থেকে নেন ২৩ কোটি টাকা।’ সুন্দরবনে কাঠ পাচারের ঘটনা জানতে টিআইয়ের প্রতিবেদনের প্রয়োজন হয় না। সেখানে কাঠ পাচারের ঘটনা সব সময়ই ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের শক্তি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেয়, যার প্রমাণ আমরা গেল সিডর ও আইলার সময় পেয়েছি। কিন্তু অব্যাহত গাছ কাটার ফলে সুন্দরবন ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এ খাতে দুর্নীতি বন্ধে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে সুন্দরবনসহ যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, সেগুলো রক্ষা করা। পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে বন্ধ করা। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর নীতি স্ববিরোধী। তারা দুর্নীতি বন্ধে বিরতিহীন সুপরামর্শ দিলেও প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষণ নেই। টিআইয়ের প্রধান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির আশঙ্কা প্রকাশ করলেও অর্থায়নের ব্যাপারে ধনী দেশগুলোর গড়িমসি সম্পর্কে কিছু বলেননি। তারা অস্ত্র খাতে প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ছাড় নিয়ে গড়িমসি করে আসছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জলবায়ু পরিবর্তনে যেহেতু ধনী দেশগুলোর ভূমিকা মুখ্য, সেহেতু এর ক্ষতিপূরণও তাদের দিতে হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত সভায় উত্থাপিত সুপারিশ ও পরামর্শগুলো আমলে নিলে এই খাতে দুর্নীতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসংক্রান্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে দলীয়প্রীতি ও স্বজনপ্রীতি পরিহার করে পেশাগত সততা ও দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকল্পসংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে তারাও এ সম্পর্কে জানতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.