মা, দেশ ও বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি চাই-নিকৃষ্ট নকলবাজ

জগতে বিশুদ্ধ নকল পাওয়া কঠিন, কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম এক বিশুদ্ধ নকলের খোঁজ মিলেছে। তার নাম নকল, সনদ নকল, পদ নকল, কাজ নকল, আচরণ নকল। কথায় বলে, শঠের ছলের অভাব হয় না। নকল রবীন্দ্রপ্রেমী সেজে দেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে জাপানি নাগরিকদের পর্যন্ত প্রতারণা করতে যিনি পারেন, তিনি নিঃসন্দেহে নকলকুল শিরোমণি।

এই ব্যক্তি জাপানে বাংলাদেশিদের লজ্জিত করেছেন, নষ্ট করেছেন জাতীয় ভাবমূর্তি। প্রথম আলোয় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতারিত জাপানিরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক দারাদ আহমেদ ওরফে বদরুলের উপযুক্ত স্থান কারাগার, সেখানেই তিনি বেশি মানানসই।
প্রতারণার বহু বিচিত্র কৌশল বিশ্ববাসী জেনেছে, বাংলাদেশিদেরও এ বিষয়ক জ্ঞান টনটনা। কিন্তু কেউ কি কখনো শুনেছে, কেউ নিজের মায়ের সঙ্গেও প্রতারণা করতে পারে? শিক্ষাবঞ্চিত গৃহিণী মাকে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত করিয়েছেন, নিজেকে দেখিয়েছেন একাধারে ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী রবীন্দ্রপ্রেমী হিসেবে। বেশ কয়েকজন রবীন্দ্রপ্রেমী জাপানি নাগরিককে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন ছয় কোটি টাকা। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বানানোর কথা বলে এলাকার একটি মসজিদের ছবিকে সেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে চালিয়ে দাতাদের চোখে ধুলা দিয়েছেন। রবীন্দ্রভারতীর ছাত্রনেতা, বিএনপির জাপান শাখার নেতা, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হিসেবেও দাবি করেছেন। জীবনের হেন ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি প্রতারণা করে লাভবান হননি। তাঁর ধোঁকাবাজির শিকার তাঁর গ্রামবাসীও। তাঁর সর্বশেষ প্রতারণার শিকার গত মঙ্গলবারের প্রথম আলো। তাঁর কীর্তি যাতে এলাকাবাসী জানতে না পারে, সে জন্য গত মঙ্গলবারের প্রথম আলো পত্রিকার বান্ডিল তিনি কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ নিবিড়। অনেক জাপানি লেখক-শিল্পী-বিশেষজ্ঞ বাঙালি সংস্কৃতির অগ্রণী নায়কদের বিষয়ে আগ্রহী। বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ও দরদি মানুষের সংখ্যা বিশ্বেও কম নয়। তাতে যেমন বাংলাদেশ সম্মানিত হয়, তেমনি দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়। এই প্রীতি ও মানবিকতার যোগাযোগের পথের কাঁটা হলো দারাদ আহমেদের মতো প্রতারকেরা। এদের দ্বারা কারও রক্ত না ঝরলেও নিহত হয় জাতীয় মর্যাদা। অবিলম্বে এই ঘৃণিত প্রতারককে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ ধরনের অপকর্ম করতে না পারে, তার বিধিব্যবস্থাও চাই।

No comments

Powered by Blogger.