আইনের প্রয়োগ ছাড়া স্থায়ী প্রতিকার হবে না-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা ১১ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সংগঠনটির দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ রক্তপাতের ঘটনার কয়েক দিন পরেই। সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনটি বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশের

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহল, এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও তাদের আচরণের নিন্দা জানানো হয়েছে, কিন্তু তাদের অছাত্রসুলভ, দুর্বৃত্তিমূলক তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারজন ছাত্রকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে সাতজনকে। কিন্তু এসব লঘু শাস্তিতে তাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে কি না বা তাদের শাস্তির দৃষ্টান্ত অন্যদের সহিংসতা পরিহারের সহায়ক হবে কি না, তা বলা কঠিন। কারণ, এ রকম সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনা অনেক ঘটেছে, কিন্তু সহিংসতা বন্ধ হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বড় সমস্যা হলো, সেখানকার আবাসিক হলগুলোয় বিপুলসংখ্যক বহিরাগত তরুণ বাস করে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র নয়। তাদের অনেকেই অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে নানা ধরনের অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত। ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে দলাদলি ও প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে এই অবৈধ শিক্ষার্থীরা মারাত্মক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। লক্ষ করার বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক স্থানে তথাকথিত ছাত্রলীগের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারির সময় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করছেন, কুপিয়ে জখম করছেন, হাত-পায়ের রগ কেটে দিচ্ছেন। এসব আগে বেশি লক্ষ করা যেত ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মধ্যে। অবশ্য তাঁরা হাত-পায়ের রগ কাটতেন প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের। ছাত্রলীগ সেটা করছে নিজেদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, আবাসিক হলগুলোয় অবৈধ শিক্ষার্থীরা আর থাকতে পারবে না। এ কথা মুখে বললে বা নোটিশ জারি করলেই কাজ হবে না। অবৈধ শিক্ষার্থীদের হলগুলো থেকে বের করে দিতে হবে। আর বৈধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষায় উচ্ছৃঙ্খল, তাঁদের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় না জড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হবে বলে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা-ও যথেষ্ট হবে না। দাঙ্গা-হাঙ্গামার আইনি প্রতিকার প্রয়োজন, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় যারা নানা রকম অপরাধকর্মে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না বলেই অপরাধবৃত্তি ও হানাহানি বন্ধ হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.