পেশার সঙ্গে মানানসই নয়-চিকিৎসক ধর্মঘট

রাজশাহী চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ধর্মঘট করেছেন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সঙ্গে এক রোগীর আত্মীয়ের অপ্রীতিকর ঘটনার পর শুরু হয়েছিল এই ধর্মঘট। যে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন তেরো-চৌদ্দ শ রোগী থাকে,

সেখানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের এ ধরনের ধর্মঘট কী পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, তা অনুমান করা যায়। চিকিৎসা যে ধরনের সেবামূলক একটি পেশা, তাতে কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানানো একজন চিকিৎসকের পেশাগত নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে বেমানান। কারণ যা-ই থাক, চিকিৎসকদের ধর্মঘটে যাওয়ার বিষয়টি তাই যৌক্তিক প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই।
শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা যে অভিযোগ করেছেন, তার সত্যতা থাকতে পারে। তাঁরা বলেছেন, এক রোগীর আত্মীয় তাঁদের মারধর করেছেন। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য ও দুঃখজনক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যেকোনো পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে যদি কোনো ঘাটতি থেকে থাকে, তা পূরণ করার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত রোগীর আত্মীয়কে পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পরে তাঁকে কী বিবেচনায় ছেড়ে দিয়েছে, সেটা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারে। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা যে অভিযোগ করেছেন, তার পাল্টা অভিযোগও রয়েছে। যে রোগীর আত্মীয়কে নিয়ে এত ঘটনা, তিনি অভিযোগ করেছেন যে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক কোনো অ্যাপ্রন ছাড়াই রোগীর ক্ষতস্থান ড্রেসিং করতে আসেন এবং আনাড়ির মতো কাজ করতে থাকলে তাঁর ভাই তাঁর পরিচয় জানতে চান এবং ঘটনার শুরু এখান থেকেই। এ ধরনের অভিযোগও তো উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
এ ঘটনার জন্য যে পক্ষই দায়ী হোক না কেন, হাসপাতালে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এ ঘটনার পর সব শিক্ষার্থী চিকিৎসক চিকিৎসা বন্ধ করে বসে থাকবেন, রোগীরা কাতরাতে কাতরাতে মারা গেলেও কোনো চিকিৎসক সেবা দিতে আসবেন না—এ পরিস্থিতি চিকিৎসা পেশার সঙ্গে মানানসই নয়। যাঁরা শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, ভবিষ্যতে এ পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করবেন, তাঁরা যদি তাঁদের পেশাগত জীবনের সূচনাতেই পেশার মূল নীতি-নৈতিকতার দিকগুলো বিবেচনায় না রাখেন, তবে তা খুবই হতাশার। যে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে গিয়েছিলেন, তাঁদের আমরা বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখার অনুরোধ জানাই।

No comments

Powered by Blogger.