স্বীকৃতি-ধন্য শ্রেণীভুক্ত দ্বিতীয় জন পল by ফাদার কমল কোড়াইয়া

প্রয়াত পোপ দ্বিতীয় জন পলের জীবিতাবস্থায় বীরোচিত গুণাবলি, অকৃত্রিম সেবাকাজ এবং অসাধারণ আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ জীবনযাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ১ মে ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তাঁকে ধন্য শ্রেণীভুক্ত করছেন। মৃত্যুর পর তিনিই সর্বাপেক্ষা অল্প সময়ের মধ্যে এ মহান সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন।

এর পরের ধাপেই তাঁকে সাধু (Saint) হিসেবে ঘোষণা করা হবে। পোপ হিসেবে ২৭ বছর অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ২ এপ্রিল ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ধন্য শ্রেণীভুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি অলৌকিক ঘটনা। অর্থাৎ, এমন একটি ঘটনা, যা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণ করা অসম্ভব। পোপ দ্বিতীয় জন পলের ব্যাপারেও এমনটি ঘটেছে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের কথা। ফ্রান্সের নাগরিক সিস্টার মারিয়া সাইমন পিয়্যারে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। স্থানীয় চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বলেছেন, তিনি পারকিনসন রোগে ভীষণ অসুস্থ। সিস্টার মারিয়া সাইমন প্রয়াত পোপ দ্বিতীয় জন পলের কাছে তাঁর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করেন। দেখা গেল, অতি অল্প দিনের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো ব্যাখ্যাই দিতে পারলেন না, কীভাবে সিস্টার মারিয়া সাইমন সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন। এ অলৌকিক ঘটনাটাই পোপ দ্বিতীয় জন পলকে ধন্য শ্রেণীভুক্তকরণের পথ সুগম করে দিয়েছে।
পোপ দ্বিতীয় জন পলের ধন্য শ্রেণীভুক্তকরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী, পোল্যান্ড ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট, বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় অ্যালবাট ও রানি পৌলাসহ ৫০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। তা ছাড়া এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পাঁচ লক্ষাধিক তীর্থযাত্রী এখন ভ্যাটিকানে অবস্থান করছেন। তাঁদের মধ্যে ৪০ হাজার তীর্থযাত্রী এসেছেন বিমানভাড়া করে, অন্যরা এসেছেন বাসে বা নৌকায়।
পোপ দ্বিতীয় জন পলকে সাধু শ্রেণীভুক্ত করার জন্য প্রয়োজন আর একটি অলৌকিক ঘটনা। ভ্যাটিকান সূত্রমতে, পোপ দ্বিতীয় জন পলকে সাধু শ্রেণীভুক্তকরণের উপযোগী বিশ্বাসযোগ্য ২৭০টি অলৌকিক ঘটনার আবেদন এরই মধ্যেই তারা পেয়েছে। এখন চলছে এগুলোর ওপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আশা করা হচ্ছে, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাঁকে সাধু শ্রেণীভুক্ত করা সম্ভব হবে।
পোপ দ্বিতীয় জন পলকে বিশ্বের প্রথম ‘সর্বজনীন পোপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আধুনিক সভ্যতায় তিনি সর্বমহলে বিশেষ পরিচিত মুখ। বিংশ শতাব্দীতে তিনি ছিলেন খুবই প্রভাবশালী নেতা। তাঁরই সক্রিয় সহযোগিতায় তাঁর জন্মস্থান পোল্যান্ডে নাস্তিকতাবাদের পতন হয়। রাশিয়াসহ অন্যান্য নাস্তিক দেশের পতনেও তাঁর ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হয়। নাস্তিক প্রভাবশালী নেতা কাস্ত্রোর দেশ কিউবাতেও ধর্মবিশ্বাস বিস্তার, গির্জা নির্মাণ ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণালয় স্থাপনে দ্বিতীয় জন পল বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। পুঁজিবাদ নীতির অতিরিক্ত কুপ্রভাবেরও সমালোচনা করেছেন তিনি।
১৮ মে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী পোপ দ্বিতীয় জন পল হলেন ৪৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম অ-ইতালিয়ান পোপ।
ফাদার কমল কোড়াইয়া: ধর্মযাজক

No comments

Powered by Blogger.