সংসদে বেহাল সড়কপথ-জাতীয় ইস্যুতে এমন মুখরই থাকুন

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বেহাল সড়কপথ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের জোটের সদস্যরা একের পর এক অধিবেশনে মূলত অকারণ অনুপস্থিত। তারপরও সরকারি জোটের সদস্যরা মৃত্যুকূপে পরিণত হওয়া বিভিন্ন সড়কের চিত্র তুলে ধরেছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে পদক্ষেপ নিতে প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছেন।
আমরা বলতে পারি যে, তারা প্রকৃত জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন, যা জাতীয় সংসদে বিরল। জনগণ তাদের সাধুবাদ দেবে। সাধারণত অনেক সংসদ সদস্য জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক বা স্থানীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ দিয়ে সরকার কিংবা দলের মূল নেতার প্রশস্তি-প্রশংসায় বেশি সময় ব্যয় করেন। বিরোধী পক্ষের সমালোচনাতেও থাকেন খড়্গহস্ত। জনগণ যে এটা পছন্দ করে সেটা সবসময় তারা বুঝতেও পারেন না। এভাবে সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ে, দলের জন্য বিপদ সৃষ্টি হয় এবং সর্বোপরি জনজীবনের অনেক সমস্যা যথাযথ গুরুত্ব পায় না। আমরা আশা করব যে, সংসদে আলোচনার পর ভেঙে পড়া সড়কপথের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হবে এবং তার বাস্তবায়ন কাজ পাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। একই সঙ্গে চাই কাজের মান ঠিক রাখা এবং দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা। সন্দেহ নেই যে, এ কাজে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম। কিন্তু সে অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা হলে পথের এমন দুর্দশা হতে পারে না। এটা হয়তো ঠিক যে, পূর্ববর্তী সরকার সড়কপথের সংস্কারের কাজ অবহেলা করেছে। কিন্তু সে জন্য বর্তমান সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এমনটি অগ্রহণযোগ্য। অর্থ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পারস্পরিক দোষারোপও বর্তমান আপদকালীন সময়ে কেউ পছন্দ করছে না। একই সঙ্গে এটাও বলা দরকার যে, শুধু যোগাযোগ নয়, আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাজে গাফিলতি ও উদ্যোগহীনতার খবর নিয়মিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও ব্যর্থতা সীমাহীন। বৃহস্পতিবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে যেভাবে সদস্যরা আলোচনা করেছেন, তেমনটি অন্য মন্ত্রণালয় নিয়েও হতে পারে এবং সেটা হওয়া উচিত। এ ঘটনা থেকে সব মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা শিক্ষা নেবেন, এটাই জনগণ আশা করে। সময়ের কাজ সময়েই শেষ করা চাই। জাতীয় সংসদও সেটাই করেছে। এ প্রতিষ্ঠানকে দেশবাসী এমনই প্রাণবন্ত হিসেবে দেখতে চায়। বিরোধীদলীয় সদস্যদেরও এ প্রক্রিয়ায় শামিল হওয়া উচিত। সরকারি দলের সদস্যরা দলীয় মন্ত্রীদের কাজের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং তা না করতে হুইপ জারি করা হয়নি। বিরোধীদলীয় সদস্যরাও জাতীয় ইস্যু নিয়ে সংসদে কথা বললে বাধা পাওয়ার কথা নয়। যদি তেমনটি ঘটে, সেটাও সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের কারণে জনগণের কাছে স্পষ্ট ধরা পড়বে। বাংলাদেশের সরকারি কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি প্রভৃতি সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনি সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার প্রবণতাও প্রকট। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একা কতদিক সামাল দেবেন? স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম যথার্থই বলেছেন, একজন ম্যারাডোনা ১১ জনের খেলা খেলতে পারে না। সড়কপথ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং এ ধরনের আরও মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জরুরি সদস্যার সমাধানে তার তরফে নির্দেশনা ও পরামর্শ স্পষ্ট। এখন সংশ্লিষ্টদের কাজ হচ্ছে সঠিক কাজটি সঠিক সময়ে করা।

No comments

Powered by Blogger.